ঢাকা: রাজধানীর গুলশানের পূর্ণিমা রেস্টুরেন্ট। নামটি জ্বলজ্বলে হলেও এর সঙ্গে জড়িয়েছে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ।
অভিযান সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, রেস্টুরেন্টটি মাত্র এক বছরেই ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৪৪ লাখ ৯ হাজার ৯৪৪ টাকা। তাদের বিরুদ্ধে সবক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) ইস্যু না করা, পার্সেল খাবারের ক্ষেত্রে নীল চালান ব্যবহার ও মূসক চালান না দেওয়া, প্রকৃত বিক্রি গোপন করে রাজস্ব ফাঁকিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
তবে পূর্ণিমা কর্তৃপক্ষের দাবি, আইন না বুঝেই তারা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
মূসক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, পূর্ণিমায় ইসিআর চালানে ভ্যাটকে ডিসকাউন্ট দেখানো হয়। ভ্যাট চালান চাইলে ‘কাহিনী’ শোনানো হয়। এ নিয়ে অসংখ্য ভোক্তা মূসক গোয়েন্দায় অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে চলে অভিযান।
অভিযানকালে রেস্টুরেন্টের মালিক আনোয়ার হোসাইন দাবি করেন, তারা প্রতিটি ইসিআরের ভ্যাট সরকারকে দেন। কিন্তু গোয়েন্দারা দেখতে পান, তারা হিসাবে ভ্যাট ডিসকাউন্ট দেখাচ্ছেন।
আনোয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বলেন, পার্সেলের ওপর ভ্যাট কাস্টমার থেকেও নিইনি, তাই সরকারকেও দিইনি। তাছাড়া, রেস্টুরেন্টের ওপর প্রথম যখন ভ্যাট আরোপিত হয়, তখন থেকেই আমরা ভ্যাট দিই। সুতরাং ভ্যাট ফাঁকির প্রশ্নই আসে না।
পূর্ণিমার মালিক বলেন, আমরা আইন মানি, কিন্তু আইন জানি না। চালান দিয়েছি, কিন্তু তাতে ভ্যাট নিইনি। বুঝে-শুনে ভ্যাট ফাঁকি দিইনি।
তবে, এখন থেকে ইসিআর ছাড়া আর চালান কাটবেন না বলেও জানান তিনি।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, পূর্ণিমা কর্তৃপক্ষ ভেবেছে, ভোক্তা থেকে ভ্যাট আদায় না করলে সরকারকেও দিতে হয় না। কিন্তু ভ্যাট তো দেবে ভোক্তা।
তিনি বলেন, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে শুধু সরকারের পক্ষে ভ্যাট আদায় করবে, আর মাস শেষে জমা দেবে। সরকার তাদের ভ্যাট মওকুফের ক্ষমতা দেয়নি। ব্যবসায়ী ভ্যাটে ডিসকাউন্ট দিলে তা নিজ পকেট থেকে সরকারকে দিতে হবে।
অবশ্য পূর্ণিমা কর্তৃপক্ষ ‘আইন না জানা’র কথা বললেও গোয়েন্দাদের পাওয়া তথ্য সেটা বলছে না। গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ণিমা ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৪৪ লাখ ৯ হাজার ৯৪৪ টাকা মূসক ফাঁকি দিয়েছে।
রেকর্ড অনুযায়ী, এ একবছরে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করেছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৮৬ টাকার পণ্য। এরমধ্যে ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৮৪৭ টাকা প্রদেয় ভ্যাটের বিপরীতে পরিশোধ করেছে ২৭ লাখ ৯ হাজার ৯০৩ টাকা।
এর আগের বছরগুলোতেও পূর্ণিমার বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
এছাড়া, মাসিক দাখিলপত্রে সর্বমোট প্রাপ্তি না দেখানো, মূসক নিবন্ধনপত্র (মূসক চালান-৮) দৃশ্যমান স্থানে (ক্যাশিয়ারের পেছনে) না ঝুলনোসহ বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে গোয়েন্দা দল।
গোয়েন্দা দলের উপস্থিতির খবরে পূর্ণিমার কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক তথ্য, দলিল, কম্পিউটার, সার্ভার বাইরে অন্যত্র রেখে আসে। পরে গোয়েন্দা দল এসব দালিলিক প্রমাণ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, না বুঝে ভুলের কথা বলছে পূর্ণিমা। কিন্তু হিসাব বলছে অন্য কথা।
তিনি বলেন, এ পূর্ণিমার হাত ধরে রেস্তোরাঁ খাতে ভ্যাট আদায় শুরু হয়েছে। এ অবদানে আমরা তাদের সম্মান করি। কষ্ট পাই, যখন এ পূর্ণিমার বিরুদ্ধেই ভ্যাট ফাঁকির মামলা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
আরইউ/এইচএ/