ঢাকা: বন্দরনগরীর আগ্রাবাদ শাখার এক পলাতক গ্রাহকের শত শত কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করছে বেসরকারি মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড।
খেলাপি ঋণের বোঝা কমাতে এ ঋণও পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করার উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি।
ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র বলছে, ২০১০ সালে নগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান শাহীন ৮টি প্রতিষ্ঠানের নামে সাতটি তফসিলি ব্যাংক থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন। পরে তা তিনি বিদেশে পাচার করেন বলে অভিযোগ তোলা হয়।
এরপর বিদেশ চলে যান তিনি। ২০১২ সালের পর থেকে পলাতক রয়েছেন শাহীন। তাই তার সব ঋণই এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে শাহীন সপরিবারে কানাডায় থাকেন। ব্যবসায়িক কারণে দুই বছর ধরে দেশে আসতে পারছেন না দাবি করে ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন জানিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ই-মেইল করেন তিনি।
আবেদনে শাহীন দাবি করেন, দেশে ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতি বিরাজের কারণে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারেননি। এজন্যই ব্যাংক থেকে নেওয়া টাকাও ফেরত দিতে পারেননি তিনি।
তাই ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিলে তা ফেরত দিতে পারবেন তিনি।
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে শাহীনের আবেদনটি অনুমোদন করেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ।
এরপর ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। তা যাচাই-বাছাই শেষে নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি)।
জানা যায়, শাহীনের প্রতিষ্ঠানের নামে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৩০০কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা। এর মধ্যে মিশম্যাক শিপ ব্রেকিংয়ের নামে দেওয়া হয়েছে ২১০ কোটি টাকা।
ওই ২১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে আবেদন করেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, মিজানুর রহমান শাহীনের স্ত্রী কামরুন নাহার সাথী এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক। মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা দিয়েই স্ত্রীর নামে শেয়ার কিনেছেন শাহীন। যদিও এখন কানাডায় বসবাস করছেন তারা।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে ব্যবসা করছেন শাহীন।
ব্যাংকের কাছে পলাতক থেকেও তার স্ত্রী হয়েছেন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক। আর পলাতক থেকেই আরও কিছুদিন বৈধ গ্রাহক হিসেবে থাকতে চান শাহীন।
যোগাযোগ করা হলে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মশিহুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, শাহীনের মালিকানাধীন সিলভিয়া গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ মিশম্যাক শিপ ব্রেকিং, ফয়জুন শিপ ব্রেকিং, বি আর স্টিল মিলস, মুহিব স্টিল অ্যান্ড শিপ রি-সাইক্লিং, এমআরএম এন্টারপ্রাইজ, এমআর শিপিং লাইনস, আহমেদ মোস্তফা স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ ও সানমার হোটেলস লিমিটেড।
আর এসব প্রতিষ্ঠানের আমদানির বিপরীতে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ২২৩ কোটি ২০ লাখ টাকা, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড ১৫১ কোটি ৩৭ লাখ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড ৮৫ কোটি ৫৭ লাখ, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ৪৮ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড ৪৭ কোটি ৭ লাখ ও ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড ২৩ কোটি ৪৫ লাখ ঋণ দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
এসই/এমএ/জেডএম