ঢাকা: চলতি মেয়াদে আবাস ও খামারমুখী উন্নয়নে মনোযোগ বাড়িয়েছে সরকার। বেশ কিছু প্রকল্পে ইতোমধ্যে লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছেছে বলেও দাবি করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় বলছে, ক্ষুদ্রঋণ নয়, বরং ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও প্রশিক্ষণে স্বাবলম্বী হবে দরিদ্র জনগোষ্ঠী। সে লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে যাবতীয় কর্মকাণ্ড।
বর্তমান মেয়াদের দুই বছর শেষ করে বিগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য দূর করে স্বাবলম্বী করাই লক্ষ্য সরকারের। তাই ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ বাস্তবায়নে গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। এখানে ক্ষুদ্রঋণ নয়, বরং ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুবিধাভোগী পরিবারের কৃষিজমির সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে পারিবারিক শ্রম ও স্থানীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে দারিদ্র্য দূর করতে চায় সরকার। ২৪ লাখ পরিবারকে গত ৪ বছরে ৪০ হাজার ৪৪৫টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
সুবিধাভোগীদের নিজস্ব সঞ্চয় ৮৩০ কোটি টাকা এবং সরকারের দেওয়া বোনাস ৭১২ কোটি টাকা। ঘূর্ণায়মান ও অন্যান্য তহবিলের পরিমাণ ৯৮১ কোটি টাকা। এভাবে ২৪ লাখ দরিদ্র পরিবারের মোট তহবিলের পরিমাণ ২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকারও বেশি।
এতে উল্লেখ রয়েছে- গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্যরা উঠান বৈঠকে স্বাধীনভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষিভিত্তিক খামার, যেমন- মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু পালন, সবজি বাগান, নার্সারি ইত্যাদি খামার তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে সারাদেশে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র খামারের সংখ্যা ১৮ দশমিক ৭২ লাখ।
এগুলোতে বিনিয়োগ ২ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
কর্মকর্তারা বলেন, বিনিয়োগে তাদের জীবন-মানের উন্নয়ন ও দৈনন্দিন আয় বৃদ্ধির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা এসেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অবদানে সুবিধাভোগীরা অনলাইনে ২ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন। ৬৪ জেলার ৪৮৫ উপজেলায় এ অনলাইন কার্যক্রম চালু করেছে সরকার।
দেশে দুগ্ধ উৎপাদন বাড়ানো, বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের জন্য আত্মকর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে চায় সরকার।
দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সমবায় অধিদফতর ‘সমবায়ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদন নিশ্চিতকরণ’ এবং ‘দুগ্ধ সমবায় সমিতি’র কার্যক্রম বাড়িয়ে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনা জেলার দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়িত হয়েছে, যা দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ভূমিকা রাখছে।
এদিকে কৃষিজমির অপচয় রোধ ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বগুড়া আরডিএ ইতোমধ্যে দেশের ৭টি বিভাগের ৭টি জেলায় ১টি করে পল্লী জনপদ (উন্নত আবাসন) ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একটি প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্প নিয়েছে।
‘চর জীবিকায়ন কর্মসূসি’র প্রথম পর্যায়ের আওতায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার ২৮টি উপজেলায় ১৫০টি ইউনিয়নের আড়াই লাখ দরিদ্র প্রত্যক্ষ সুবিধা পেয়েছে। পরোক্ষভাবে পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এর মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন।
প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হওয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ডিএফআইডি এবং অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ৮১ দশমিক ৭২ মিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ অর্থ সহায়তায় মোট ৮৩৭ কোটি ৫৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে চর জীবিকায়ন কর্মসূচি-২য় পর্যায়ে (১ম সংশোধিত) বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) ২০১৪-১৫ সময়ে ৮৮টি প্রশিক্ষণ, অবহিতকরণ এবং কর্মশালা করেছে। এতে ৩ হাজার ৬৫১ জনকে প্রশিক্ষিত হয়েছেন।
যেভাবে কাজ এগোচ্ছে, সেভাবে দারিদ্র্য দূর অসম্ভব নয় এবং সময়ও সুদীর্ঘ নয় বলে মনে করেন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা ক্রমশই আমাদের কাজ গুছিয়ে আনছি। সময় ও ব্যয়ের তুলনায় ফল বেশি পাচ্ছি এখন। আমরা শুধু দারিদ্র্য দূর নয়, মানুষকে প্রশিক্ষিত ও স্বাবলম্বী করে তুলতে চাই। যাতে তারা দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কাতারে চলে আসে। শুধু থাকা-খাওয়া নয়, সঞ্চয় বাড়ানোর সুযোগ যেন পায় মানুষ- সেটাই চাওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
এসকেএস/এএসআর