ঢাকা: ব্যাংক ঋণের অযুহাত দেখিয়ে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফাঁকি দিচ্ছে রাজধানী বনানীর অভিজাত রেস্তোরাঁ ক্যাফে হলিউড।
সম্প্রতি ‘ঋণ কৌশলে’ দেখানো প্রায় ১৯ লাখ টাকার মূসক ফাঁকির সন্ধান পেয়েছে ঢাকা উত্তরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের গুলশান সার্কেল।
দেশের প্রথম ‘হিরো সিম্বল’ পিৎজা, সেট মেন্যু, ডুবার মিল, থাই, চাইনিজ, ইন্ডিয়ানসহ দেশি-বিদেশি সব খাবারের জন্য ভোজনরসিক সব বয়সের মানুষের কাছে জনপ্রিয় ক্যাফে হলিউড।
কিন্তু অভিযোগ ওঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি বাহারি রং ও ডিজাইনে নির্মল পরিবেশে ভোক্তাদের কাছ থেকে ইসিআর চালানে মূসক নিলেও সরকারের রাজস্বে তা জমা করে না।
এমনকি ব্যাংক ঋণের কথা বলে কর ফাঁকিও যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুর্নিদিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা উত্তর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট গুলশান বিভাগের প্রিভেন্টিভ দল অভিযান চালায় ওই রেস্তোরাঁয়।
চিরুনি অভিযানের এক পর্যায়ে রেস্তোরাঁর একটি কক্ষে সংরক্ষিত আটটি শপিং ব্যাগে ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) মেশিনের চালানপত্রসহ প্রতিষ্ঠানটির ক্রয়-বিক্রয়ের রেকর্ড জব্দ করা হয়।
অভিযানে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, সার্কেল অফিসে দাখিল করা চালানপত্রে সেবার মূল্য ও তার ওপর প্রযোজ্য মূসক পরিশোধের তথ্যে ব্যাপক গরমিল রয়েছে।
‘রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ ভোক্তা থেকে ইসিআর মূসক নেন, কিন্তু তা ফাঁকি দিতে ইসিআর মেশিন টেম্পোরারিং করে বেশিরভাগ তথ্য মুছে ফেলেন তারা। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়,’ বলেন নাম উল্লেখে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য রেস্তোরাঁয় বিক্রির সব রেকর্ড রাখেন না সংশ্লিষ্টরা। বিক্রির ওপর প্রতিমাসে গড়ে এক লাখ টাকা মূসক প্রযোজ্য হলেও মাত্র ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তারা।
এ বিষয়ে ক্যাফে হলিউড কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিষ্ঠান চালাতে ঋণের প্রয়োজন হয়। ব্যাংক ঋণ নিতে হলে বেশি পরিমাণ বিক্রির রেকর্ডও দেখাতে হবে। সে হিসেবে অনেকগুলো ইসিআর রেকর্ড বই করা হয়েছে।
তবে ‘মূসক ফাঁকি দিতে প্রতিষ্ঠানটির সবই কাল্পনিক গল্প’ বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।
জব্দ কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ সালের মে থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বেশি।
১৫ শতাংশ হারে প্রতিষ্ঠানটির প্রযোজ্য মূসক ১৯ কোটি ৯৩ লাখ ৬ টাকা। কিন্তু পরিশোধ করেছে ১ লাখ ৫ হাজার ২০০ টাকা। আর ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৮০৬ টাকাই ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ক্যাফে হলিউডের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী মূসক ফাঁকির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংক ঋণের নামে মূসক ফাঁকি আমরা ধরতে পেরেছি।
অভিযানে প্রতিষ্ঠানের হিসাব সংরক্ষণ দলিলপত্র, একটি ইসিআর মেশিন ও একটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ফাঁকি দেওয়া মূসক আদায় করা হচ্ছে।
কাউকে শাস্তি নয় মূসক সচেতনতা তৈরি করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
আরইউ/এমএ