ঢাকা: ১৯৮১ সাল থেকে বর্তমানেও বাংলা খাবারের ব্র্যান্ড নাম হোটেল কস্তুরী। বাংলা খাবার ভক্ত দেশি-বিদেশি আসবেই।
দু’বেলা হোটেলের খাবার, সঙ্গে মাসে কয়েক লাখ টাকার পার্সেল। মূসক নেওয়া হয়, কিন্তু পকেটস্থ করতে! ধূর্ত কর্মকর্তারা সেই মূসক হজম করতে রাখেন না প্রমাণ!
সম্প্রতি রাজধানীর পুরানা পল্টনে হোটেল কস্তুরীতে মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অভিযানে মূসক ফাঁকির চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
মূসক গোয়েন্দার একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকী, যেকোনো পার্টি বা কনফারেন্স করার ব্যবস্থা ও সঙ্গে রয়েছে কস্তুরীর সুস্বাদু খাবার। হোটেলটির কোথাও কোনো শাখাও নেই।
ব্যাংক, বিমা, যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের যেকোনো ছোট-বড় অনুষ্ঠানে বিশাল অঙ্কের খাবার সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু হোটেলটির বিরুদ্ধে মূসক ফাঁকির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
সূত্র আরো জানান, সম্প্রতি মূসক গোয়েন্দার ফেসবুক পেজে (https://web.facebook.com/vatintelligencebd/?fref=ts) অসংখ্য ভোক্তা ও পার্সেলে নেওয়া প্রতিষ্ঠান মূসক ফাঁকির বিষয়ে অভিযোগ করেন।
একই সঙ্গে সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মূসক ফাঁকির অভিনব এ কৌশল নিয়ে মূসক গোয়েন্দা কার্যালয়ে অভিযোগ করেন।
সত্যতা নিশ্চিতে চলে অভিযান। মূহুর্তে সরিয়ে ফেলা হয় রেকর্ডপত্র। কিন্তু চলে চিরুনি অভিযান, বের হয়ে আসে ফাঁকির কিছু চিত্র।
মূসক নেয়, কিন্তু দেয় নিজস্ব চালান। ইসিআর ও পস মেশিনে চালান ইস্যু করে, কিন্তু রেকর্ড রাখে না। হাতে লেখা রশিদ দেয়, তাতে মূসক রেকর্ড থাকে না।
হোটেলের খাবারে কম্পিউটার চালান দেয় কালে-ভদ্রে, কিন্তু পার্সেলে বড় অঙ্কের টাকার রেকর্ড লুকিয়ে ফেলে। মূসক দেয় গড় হিসেবে নামমাত্র।
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটিতে দুপুর আর রাতের খাবার বিক্রি হয়। যদিও প্রতিষ্ঠানের দাবি, শুধু দুপুরের খাবার বিক্রি হয়। দৈনিক বিক্রি লাখ টাকার ওপরে।
আর মাসে পার্সেলে খাবার সরবরাহ করে গড়ে ২০ লাখ টাকার বেশি। মাসিক প্রায় ৮ লাখ টাকা মূসক প্রযোজ্য হলেও মূসক দেয় মাত্র প্রায় ৩ লাখ টাকা।
সূত্র আরো জানায়, কস্তুরীর কম্পিউটারে নেই রেকর্ড, সংরক্ষণ করা হয় না দৈনিক ও মাসিক বিক্রির রেকর্ড। ইসিআর ও পস মেশিন টেম্পারিং করে মুছে ফেলা হয় ডাটা।
অভিযানের সময় বিক্রির সঙ্গে প্রতিদিনের বিক্রির রেকর্ডসহ অসংখ্য গরমিল থাকায় জব্দ করা হয় কম্পিউটার সিপিও, ইসিআর, পস মেশিন ও কাঁচা রশিদ।
প্রথম দফা অভিযানে প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে মূসক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। জব্দকৃত কাগজপত্র যাচাই পর্যন্ত নিজস্ব চালানে মূসক নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
কিন্তু তাতেও ব্যাপক গড়মিল। দ্বিতীয় দফা অভিযানের আগে চলে নজরদারি। কিন্তু মূসক ফাঁকির চিত্র একই। সম্প্রতি (০৮ জানুয়ারি) চলে দ্বিতীয় দফা অভিযান।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক একেএম সুলতান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এতোই ধূর্ত যে, মুহুর্তে রেকর্ড সরিয়ে ফেলেন।
তিনি বলেন, পার্সেল বিক্রির তেমন রেকর্ড রাখেন না, যদিও বেশিরভাগ অনুষ্ঠানে কস্তুরীর খাবার সববরাহ করা হয়। আমরা রেকর্ডপত্র যেটুকু পেয়েছি, জব্দ করেছি। যাচাই শেষে মামলা করা হবে।
কস্তুরীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কস্তুরী বাংলা খাবারের ব্র্যান্ড। মূসক আদায় করে স্বচ্ছভাবে জমা দেয়, ফাঁকির প্রশ্নই ওঠে না।
অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, দুপুর বেলা বিক্রি করি। সঙ্গে কিছু পার্সেল। মাসে তিন সোয়া লাখ টাকা মূসক দেয়। ফাঁকি দিলে কিভাবে এতো মূসক পায়?
মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিশেষ কৌশলে প্রতিষ্ঠানটি মূসক ফাঁকি দিয়ে আসছে।
ফাঁকির চিত্র পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হোটেল, রেস্তোঁরা বা যেকোনো প্রতিষ্ঠান মূসক ফাঁকি দিয়ে পার পাবে না বলেও জানান তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জনগণ জেগে উঠেছে। তারা মূসক গোয়েন্দাকে ফাঁকির খবর দিচ্ছে। মূসক ফাঁকিবাজ হোটেলগুলোকে অভ্যাস এখনই পাল্টাতে হবে।
তিনি বলেন, কস্তুরীর মতো মালিকরা পার পাবেন না। আমরা চাই, মূসক আদায় ও প্রদান করে দেশকে এগিয়ে নিতে সকলে এনবিআরকে সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬
আরইউ/এএসআর