ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মৃত্যুঝুঁকিতে বাংলাবান্ধার পাথর শ্রমিকরা

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৬
মৃত্যুঝুঁকিতে বাংলাবান্ধার পাথর শ্রমিকরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাবান্ধা (পঞ্চগড়) থেকে ফিরে: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার পুরাতন বাজার এলাকার মনসুর আলীর স্ত্রী ও পাথর শ্রমিক রিনা খাতুন (৩৪)। তিনি ও তার স্বামী দীর্ঘ আট বছর ধরে পাথর ভাঙার কাজ করছেন।

 
 
বর্তমানে মেশিনের সাহায্যে পাথর ভাঙা হলেও আগে তারা হাতুড়ি দিয়েও পাথর ভেঙেছেন। পাথর ভাঙা ধুলা-বালিসহ বিভিন্ন খনিজের কণা বাতাসের মাধ্যমে নাক-মুখ দিয়ে শরীরের ভেতরে ঢুকে আক্রান্ত হয়েছেন মরণ ব্যাধি সিলিকোসিসে।  
 
তারা জানেন না, সিলিকোসিস কি ধরনের রোগ। এ রোগ যে তাদের হতে পারে, এ ধারণাই নেই তাদের।  
 
রিনা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, অভাবের সংসারে কাম না করলে পোলাপান নিয়া না খাইয়া থাকন লাগবো। বন্ধ হইবো পোলাপানের লেহাপড়া, নষ্ট হইবো ভবিষ্যৎ। সারাদিন কাম কইরা আমার স্বামী-স্ত্রী মিল্লা যে টেকা (হাজিরা) পাই তা দিয়া খাইতে-লইতে আর পোলাপানের লেহাপড়া চালাইতে শেষ হইয়া যায়। ঝুঁকি কারে কয় বুঝি না। শুধু জানি কাম করলেই কপালে ভাত জুটবো। আমাগো গরিবের আবার ঝুঁকি কিয়ের!
 
রিনা দুই সন্তানের জননী। নিজে পড়াশোনা না করলেও নিয়মিত স্কুলে পাঠান সন্তানদের। দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ও ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে-মেয়ের পড়ালেখাসহ সংসারের খরচ যোগাতে ঝুঁকি নিয়েই পাথর ভাঙার কাজ করছেন তিনি।
 
তেঁতুলিয়ার এই অঞ্চলে পাথরের কাজ ছাডা অন্য কোনো কাজ নেই বললেই চলে। তাই রিনার মতো শতশত নারী-পুরুষ পাথর উত্তোলন ও ভাঙার কাজ করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।  
 
তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ পাথর উত্তোলন ও ভাঙার কাজে জড়িত। নারী-পুরুষ মিলে তাদের সংখ্যা ত্রিশ হাজারের বেশি বলে জানা গেছে।
 
পাথর শ্রমিকরা প্রাণঘাতী সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। স্থানীয়ভাবে রোগটি নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। প্রাণঘাতী এ রোগ প্রতিরোধে নেই কোনো ধরনের সচেতনামূলক কার্যক্রম।
 
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কাশি, বুকে ব্যথা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট সিলিকোসিস রোগের প্রধান লক্ষণ হলেও সহজে রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। ঢাকা বক্ষব্যাধী হাসপাতাল এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র। তাই বাংলাবান্ধা পাথর শ্রমিকদের জন্য রোগটি প্রতিরোধ করাই ভালো। রোগ প্রতিরোধের জন্য পাথর শ্রমিকদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া ও বিশেষ পোশাক-মাস্ক ব্যবহার করা অতি জরুরি।
 
এ ব্যাপারে দিনাজপুর পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিচালক ও বক্ষব্যাধী শ্বাস-কষ্ট রোগ বিশেষজ্ঞ বি কে বোস বাংলানিউজকে বলেন, সিলিকোসিস একটি মরণব্যাধি। এ রোগের কিছু লক্ষণ থাকলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা যায় না।
 
সাধারণত পাথর ভাঙার ধুলি-বালি ও খনিজ নাক-মুখ দিয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করলে সিলিকোসিস হতে পারে। তবে সচেতনতার সঙ্গে নিরাপদ পোশাক ব্যবহার করে কাজ করলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই পাথর উত্তোলন শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপদ পোশাক পরে কাজ করার পরামর্শ দেন এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৬         
এমজেড/জেডএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।