ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে বড় ধরনের নিরাপত্তার অভাব (সিকিউরিটি ল্যাকস) থাকায় রিজার্ভ হ্যাকড হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম।
রোববার (১৩ মার্চ) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সচিব বলেন, সিকিউরিটি ল্যাকস থাকার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। এতে ভেতরের লোকজন জড়িত থাকতেও পারেন, আবার নাও থাকতে পারেন!
কারণ তথ্যপ্রযুক্তি যেভাবে এগোচ্ছে, সাইবার আক্রমণকারীরা তার চেয়ে একধাপ বেশি এগিয়ে থাকে। অপরাধ জগত অনেক দূর এগিয়ে গেছে। টাকা উদ্ধারের সুনিদিষ্ট সময় বলা যাবে না। এর জন্য ব্যাপকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
কম্পিউটারেরর সিস্টেম ইনস্টল করার জন্য বিশ্বব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল সার্পোট প্রজেক্টের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক আইটি এক্সপার্ট নিয়োগ করেছে।
আসলাম আলম বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংককে বোর্ড সভা ডাকার অনুরোধ করেছি। সেখানে ফোর্স অব অ্যাকশন নির্ধারণ করা হবে। ওই বোর্ড মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো ফেডারেল ব্যাংক অব নিউইয়র্ক ছাড়াও যে চারটি ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে তারা জড়িত বা কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি-না।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কোনো পদক্ষেপ নেবে কি-না জানতে চাইলে সচিব বলেন, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সেখানে একজন তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও একজন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এক্সপার্ট থাকবেন। বাকি দু’জন ঠিক করবেন অর্থমন্ত্রী। তদন্ত কমিটি তথ্য-উপাত্ত ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করে পদেক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করবে। কাজ করবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে সচিব বলেন, রিজার্ভ বর্তমানে নিরাপদ আছে। আগের কর্মকর্তাদের দিয়েই কার্যক্রম চলছে। সার্ভারের যেগুলো করাপটেড হয়েছিল, সেগুলো রিপ্লেস করা হয়েছে।
ড. আসলাম আলম বলেন, হ্যাক হওয়া অর্থ উদ্ধারের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। তবে কিভাবে টাকা নেওয়া হয়েছে সেটি শনাক্ত করা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম করাপটেড হয়ে চলে গেছে।
তিনি জানান, ০৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার কাজ করছে না। ০৬ ফেব্রুয়ারি গিয়েও তারা সেটা ওপেন করতে পারে নাই। ০৭ ফেব্রুয়ারি তারা আইটির হেল্প চায়। মোট ৪৮ ঘণ্টা সিস্টেমটা অন্যদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারা বুঝতে পারে নাই। রোববারও এসে যখন ঢুকতে পারেনি, তখন তারা আইটি বিভাগকে অবহিত করে।
আসলাম আলম বলেন, ৩৫টি লেনদেনে ৯৫১ মিলিয়ন ডলারের পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন প্রতারণামূলক ভাবে এখান থেকে গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট থেকে ৫টি লেনেদেনে ১০১ মিলিয়ন ডলার ডেবিট করেছে। এর মধ্যে ৪টা ফিলিপাইনে ৮১ মিলিয়ন ডলার, একটা শ্রীলংকায় গেছে ২০ মিলিয়ন ডলার।
গ্রাহকের নামের বানান ভুলের কারণে শ্রীলংকারটি পেমেন্ট হয়নি। এর মধ্যে ১৯ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। বাকিটা তারা চার্জ কেটেছে। ফিলিপাইনের ৪ একাউন্টে নেওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে মাত্র ৬৮ হাজার ডলার পাওয়া গেছে। বাকিটা তোলা হয়েছে।
সচিব রোববার নিজ উদ্যোগে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি বলেন, এটি আমাদের ইমেজের জন্য বড় সমস্যা হয়ে যাবে। আমরা যে সিস্টেম দাড় করিয়েছি তা কার্যকর হয়নি। এটা তার বড় প্রমাণ।
সুইস ব্যাংকের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রীর মামলা করার বিষয়ে সচিব বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্যারকে মিসগাইড করা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে এ মন্তব্য করেছেন। কারণ, স্যারকে ধারণা দেওয়া হয়েছিল ফেডের কারণেই পেমেন্ট হয়েছে। যে কারণে স্যার মামলা করতে চেয়েছেন। ফেডের কোনো ব্যর্থতা আছে কি-না এটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চাইলে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। গত ০২ মার্চ একটি অনুষ্ঠানে গভর্নরকে জানানো হলে তিনি বলেন, এটি নিয়ে তদন্ত চলছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে ব্রিফ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে জানানো হবে।
গর্ভনরকে ছুটি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না জানতে চাইলে সম্ভাবনা নেই বলেও জানান আসলাম আলম।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৬
এসই/এএসআর