ঢাকা: রাজস্ব সংগ্রহে জেলায় প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রাজস্ব ক্ষেত্র। সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর নানা উদ্যোগ নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সারাদেশে রাজস্ব সংস্কৃতি চালুর অংশ হিসেবে প্রতিটি জেলায় নিজস্ব রাজস্ব কমপ্লেক্স করার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।
সেজন্য প্রতি জেলার জেলা প্রশাসককে জায়গা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। একটি জেলায় জায়গাও পাওয়া গেছে বলে এনবিআর এর একটি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বাজেটের ৮৫ শতাংশ যোগান দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু এনবিআরের নেই নিজস্ব ভবন। ফলে, স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।
সম্প্রতি মামলা জটিলতার পর আগারগাঁও এনবিআরের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। ১২ তলা ভবন করার কথা থাকলেও বর্তমানে ৩০ তলা ভবন হচ্ছে।
ভবনটি ২০ তলার ফাউন্ডেশনে ১২তলা নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। ১২ তলা ভবন হলে সব কর অঞ্চল, এনবিআরের সব অফিস স্থানান্তর সম্ভব নয়।
বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় সর্বোচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর ৩০তলা এ ভবন হবে মহানগরী ও সরকারি ভবনের মধ্যে আগামী দিনের অন্যতম ‘আইকন বিল্ডিং’।
সূত্র আরও জানায়, এনবিআর ভবনের পর চট্টগ্রামে দেশসেরা ৪০ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে এনবিআর। কারণ রাজস্বের বিরাট একটি অংশ চট্টগ্রাম যোগান দেয়।
আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এ ভবনে কর অফিস স্থাপনের পর যে জায়গা থাকবে তাতে আয়কর মেলার স্থায়ী অবকাঠামো ও অন্যান্য মেলা করা হবে। বর্তমানে রাজধানী ছাড়াও জেলা শহর, গ্রাম এলাকায় গড়ে উঠছে কলকারখানা। অর্থনৈতিক সমতায় শহর আর গ্রামের দূরত্ব কমে আসছে।
রাজস্ব আয়ে জেলাসমূহ দিন দিন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। তাই নতুন, জন ও রাজস্ববান্ধব এনবিআর গঠন, রুপকল্প বাস্তবায়নে বৃত্তের বাইরে যাচ্ছে এনবিআর।
জেলা ও উপজেলায় করজাল বিস্তৃত করছে এনবিআর। তবে জেলা, উপজেলায় করের নিজস্ব ভবন ও জনবল কম থাকায় বিস্তারের গতি অনেকটাই মন্থর হয়ে রয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা-উপজেলায় করজাল বিস্তারে করদাতা এবং সম্ভাবনাময় রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে জরিপের ওপর জোর দিয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় প্রযুক্তি সম্ভলিত, আধুনিক নিজস্ব কর ভবন নির্মাণে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজস্ব কমপ্লেক্স হলে কাজের গতি বৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় অনেক বেড়ে যাবে।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রাজস্ব কমপ্লেক্স ভবনে আয়কর, মূসক ও শুল্ক অফিস এক সঙ্গে থাকবে। মানুষ যাতে আয়কর, মূসক ও শুল্ক অফিসে অনায়াসে যাতায়াত, কর পরিশোধ করতে পারে সে উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।
চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে সব জেলা প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন। আমি নিজে সব জেলা প্রশাসককে রাজস্ব কমপ্লেক্স নির্মাণে জায়গা দিতে অনুরোধ করেছি। করদাতাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে এটি আমাদের বড় উদ্যোগ। মানুষ যাতে ভালো পরিবেশে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন এবং কর্মকর্তারা যাতে সেবার পরিবেশ পায় তা নিশ্চিত করতে এ ভবন নির্মাণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে জেলা প্রশাসকরা রাজস্ব আয় ও করজাল বৃদ্ধিতে রাজস্ব কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং জায়গা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বলেই দিয়েছেন, রাজস্ব কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি জায়গা তিনি আগেই বরাদ্দ করে রেখেছেন।
বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ সচিব রাজস্ববান্ধব উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, সারাদেশে রাজস্ব সংস্কৃতি স্থাপনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে রাজস্ব প্রশাসনকে সহায়তার নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, রাজস্ব কমপ্লেক্স হলে রাজস্ব আয় যেমন বাড়বে তেমনি রাজস্ব কর্মকর্তা আর করদাতাদের মধ্যে দূরত্ব কমে আসবে। রাজস্ব প্রশাসনের নতুন ভিত তৈরি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৬
আরইউ/পিসি