ঢাকা: একটা সময় ছিলো যখন সারা পৃথিবীতেই বাংলাদেশ ছিলো সুগন্ধি আগর চাষের জন্য বিখ্যাত। বৃহত্তর সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল ছিলো আগর গাছে সমৃদ্ধ।
সুগন্ধি উপাদান হিসেবে আরব শেখ আর ইউরোপীয় রমণীদের মন মাতাতে জুড়ি ছিলো না সিলেটের আগরের।
কিন্তু আগরের সেই দিন আর নেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আর অবহেলায় সিলেটের বনাঞ্চল থেকে আগর গাছ বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়। অথচ একটু মনোযোগ দিলেই এই আগর চাষ থেকে সম্ভব শত কোটি টাকার বৈদেশিক আয়।
অাগর গাছ একটি ঔষধী গাছ। অাগর চাষের জন্য বাংলাদেশের অাবহাওয়া খুবই উপযোগী। অাগরের তেল, বাকল, অাগরবাতি ও সুগন্ধি খুবই উপকারী।
সিলেটের বনাঞ্চল থেকে আগর গাছ হারিয়ে যাওয়ার পথে হলেও এখনও মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আগরের তেল উৎপাদিত হয়। জানা গেছে, বছরে উৎপাদিত হয় মাত্র ১ হাজার ৫শ‘ লিটার তেল।
অাগর কাঠের অভাবে বর্তমানে অাগর কারখানাগুলো বছরে ৬ থেকে ৭ মাসের বেশি উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে পারছে না।
সম্প্রতি বাংলাদেশে আগর চাষের সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে। সেখানে তুলে ধরা হয় আগর চাষ ও আগর শিল্পের সম্ভাবনার নানা দিক।
আগর গাছ হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত। এ ব্যাপারে প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ অালী বলেন, অাগর গাছ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এজন্য অাগর থেকে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করতে হবে।
তবে বাংলাদেশ থেকে আগর গাছ বিলুপ্তপ্রায় হওয়ার পেছনে অন্যতম দায়ী হলো এর ক্ষয়ে যাওয়া রোগ। এই রোগের প্রতিকার খুঁজে বের করতে আগর রক্ষায় গবেষণার ওপর জোর দেন পরিবেশ ও বন সচিব কামাল উদ্দিন অাহমেদ।
তিনি বলেন, অাগর অামাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী বনজ সম্মদ। অাগর গাছ কেন ক্ষয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে গবেষণা করতে হবে। কিভাবে অাগর চাষে সফল হওয়া যায় সেই বিষয়ে চিন্তার সময় এসেছে।
কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রচুর চারা উৎপাদন করতে হবে। অাগর গাছ কি সমস্যার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে তা শনাক্ত করে সমাধান করতে হবে। অর্থকরী সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে বিদেশে বাজার সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমানে স্বল্পপরিসরে সনাতন পদ্ধতিতে অাগর শিল্প চলমান। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অাগরকে অাধুনিক শিল্পে পরিণত করতে হবে।
তবে আগর শিল্পকে বাঁচাতে শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, এজন্য এগিয়ে আসতে হবে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও। তবেই আবার ফিরবে বাংলাদেশি আগরের সুদিন।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৬
এমঅাইএস/আরআই