ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মূসক আইন সংশোধনের উদ্যোগ

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৬
মূসক আইন সংশোধনের উদ্যোগ

ঢাকা: চলতি বছরের জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে নতুন ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’। আইনটি কার্যকর হলে সব ধরনের পণ্যের বিক্রয় মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট (মূসক) আদায় করবে সরকার।

আর এখানেই আপত্তি ব্যবসায়ীদের।
 
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজসহ সবগুলো ব্যবসায়ী সংগঠন মূসকের পরিমাণ ৮ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশ করার দাবি করছে।
 
নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন সংশোধনের দাবিতে এফবিসিসিআই’র সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুই দফা চিঠি লিখেছেন।
 
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যৌথ কমিটির সর্বসম্মত সুপারিশের আলোকে নতুন মূসক আইন সংশোধন না করে বাস্তবায়ন করা হলে দ্রব্যমূল্যের অনাকাঙ্খিত বৃদ্ধিসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে’।
 
‘এছাড়াও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের উদ্ভূত অসন্তোষ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াকে পুঁজি করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা হতে পারে বলেও দেশের ব্যবসায়ী মহল উদ্বিগ্ন’।
 
প্রধানমন্ত্রীর কাছে এফবিসিসিআই’র নেতার দাবির প্রেক্ষিতে ভ্যাট আইন জুলাই মাসে বাস্তবায়নের সব ধরনের প্রস্তুতির সম্পন্ন বলে ঘোষণাও দিয়েছেন এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।
 
তবে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ভ্যাট আইন সংশোধন করে কিছুটা সহজ হতে পারে বলে সরকারের নীতিনির্ধারণী একটি সূত্র জানিয়েছে।
 
বিষয়টি নিয়ে রোববার (১৫ মে) অর্থমন্ত্রী দিনভর বৈঠক করেছেন এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে। তবে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অর্থমন্ত্রী এবং এনবিআরের চেয়ারম্যান বিদেশ থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) ফেরার পরে আবার বৈঠক করে সংশোধনের খসড়া প্রস্তুত করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করা হবে।
 
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এনবিআরের সদস্য (শুল্ক নীতি) ফরিদ আহমেদ, সদস্য (ভ্যাট) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর, অর্থ ও বাণিজ্য সচিব সোমবার (১৬ মে) দীর্ঘ সময় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বাজেটের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও শীর্ষে ছিল নতুন ভ্যাট আইন।
 
বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী ভ্যাট আইন নিয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অল আর ফাইন’। আবার আগেরদিন এক অনুষ্ঠানে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা করে কোনো আইন বাস্তবায়নের ঘোর বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন তিনি।   তিনি বলেন, এমন  কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হন।
 
এর আগে গত ১৩ মে বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী, এনবিআরের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা। সেখানে ভ্যাট আইন নিয়ে আলোচনা হলে প্রধানমন্ত্রীও জানান, বিষয়টি নিয়ে আরও ভাববার দরকার আছে।
 
প্রধানমন্ত্রীর কাছে এফবিবিসিআই’র দেওয়া দাবিতে আরও বলা হয়, ‘মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ব্যবস্থাকে আরও ব্যবসাবান্ধব এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অধিকতর সহায়ক করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এফবিসিসিআই’র যৌথ কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় সংশোধন পূর্বক মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ বাস্তবায়ন করতে অনুরোধ জানাচ্ছে এফবিসিসিআই’।
 
ব্যবসায়ীদের এসব দাবির প্রেক্ষিতে বাস্তবায়নের শেষ মুহূর্তে এসে নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
 
২০১২ সালে ভ্যাট আইন পাস হয়।   ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে সম্পূর্ণ ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে সরকার ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের সীমা আরও এক বছর বৃদ্ধি করে। ফলে আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
 
দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজে’র সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ব্যবসাবান্ধব মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ বাস্তবায়ন হলে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবেন। ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে গেল দ্রব্যমূল্য অনেক বৃদ্ধি পাবে। এর বিরুপ প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৬
এসই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।