চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফিরে: চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাঠে মাঠে পথে প্রান্তরে আম আর আম। গাছে গাছে আম ঝুলছে।
গেলো বছরও যা ছিলো ধানের ক্ষেত, তা এ বছর আমের বাগান। আবার এ বছর যেখানে পাটের চাষ হয়েছে সেখানেই সারি বেঁধে পড়েছে আমের চারা। সেগুলো বড় হচ্ছে। আর এক দুই বছর গেলে এই মাঝে আর পাট চাষও হবে না। পুরোটাই হয়ে উঠবে আমের বাগান। এভাবেই বাড়ছে আমবাগানের পরিধি।
চাঁপাই থেকে শিবগঞ্জ-কানসাট হয়ে সোনা মসজিদ কিংবা ভোলাহাট যে পথেই যান না কেনো দেখা যাবে অনেক নতুন নতুন জমিতে আমের চাষ বাড়ছে।
এ নিয়ে বাংলনিউজের কথা হয় শিবগঞ্জের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, চাপাই নবাবগঞ্জে বর্তমানে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। আর প্রতি বছরই দুই থেকে তিন হেক্টর নতুন জমিতে আমের চাষ বাড়ছে।
শিবগঞ্জের আমবাগান মালিক সিরাজুল ইসলাম শামীম জানান তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য এই আমচাষ। পৈত্রিক সূত্রে তারা ৭০ বিঘার ওপর বড় একটি আম বাগানের মালিক। তারপরে নিজের উদ্যোগে তিনি আরও দুটি নতুন বাগান করেছেন যা আগে ধান ক্ষেত ছিলো। এসব বাগানে এখন আম হচ্ছে। আর তাতে বড় অংকের মুনাফা পাচ্ছেন এই তরুণ আমচাষী।
এভাবেই যার একটি বাগান ছিলো তা দুটি থেকে তিনটি হচ্ছে। যার কিছুই ছিলো না, হাতে কিছু অর্থ এলো আমের খাতেই লগ্নি করার কথা ভাবছেন।
বাগান ছাড়াও গৃহস্থ পরিবারের বাড়ির আঙিনাসহ আনাচে কানাচে, এখানে সেখানেও রয়েছে আমের গাছ। এসব গাছেও ফলছে নানা জাতের প্রচুর আম। যা তারা পরিবারের চাহিদা পূরণের পরেও বিক্রি করতে পারছেন।
তৌহিদুল বলেন, আম অর্থকরী ফসল। সুতরাং আমের চাষ যত বাড়বে ততই ভালো। আর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে চাঁপাইয়ে আম চাষেই বেশি উৎসাহিত করা হয়।
নতুন আম চাষ শুরু করেছেন শিবগঞ্জের শাহবাজপুর ইউনিয়নের নতুন আম চাষী মাসুদ রানা। তিনি জানালেন, নতুন পাঁচটি আম বাগান তৈরি করেছেন। দুই-এক বছরের মধ্যেই তাতে ফলন আসবে।
এই তরুণ উদ্যোক্তার আম বাগান ছাড়াও রয়েছে মাছের চাষ, কিটনাশকের দোকান। এর মধ্যে চাষেই তার মুনাফা বেশি বলে জানালেন। আর সবচেয়ে বেশি তার আয় হয়, আমের চারা উৎপাদনে। প্রতি বছর লক্ষাধিক আমের চারা তৈরি করেন মাসুন রানা। যা তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে নতুন নতুন ভূমিতে আমের চাষ হয়। আর প্রসারিত হতে থাকে আমের বাগানের পরিধি।
মাসুদ রানা বলেন, অপেক্ষাকৃত তরুণদের মধ্যে আম চাষের উদ্যোগটা বেশি দেখা যায়। তার ক্রেতাদের মধ্যেও তরুণরাই বেশি। দূর দূরান্ত থেকেও তারা আসে আমের চারা নিয়ে যায়। কেউ দুই-চারটি কেউ আট-দশটি কেউ শত শত আবার কেউ হাজার হাজার আম চারা কেনেন।
ভোলাহাটের পথে দুই দিকের সোনাজল বিলেও দেখা গেলো নতুন নতুন আমের বাগান হচ্ছে। আর এই সড়কের দুই ধারে সারি সারি আম গাছ দুই দিক থেকে ডাল ছড়িয়ে গোটা সড়ককে পরিণত করেছে ছায়াঢাকা পথে। আর এসব গাছ থেকে থোকা থোকা আমের কোনও কোনওটি সড়কের পাশে হাতের নাগালের মধ্যে ঝুলে থেকে তৈরি করেছে অপরূপ সৌন্দর্য।
বাংলাদেশ সময় ১২৫৪ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৬
এমএমকে