ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘সদিচ্ছা থাকলে শ্রমিকদের ৪৩০ কেটি টাকা দেওয়া সম্ভব’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৬
‘সদিচ্ছা থাকলে শ্রমিকদের ৪৩০ কেটি টাকা দেওয়া সম্ভব’

ঢাকা: ‘সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য ৪৩০ কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব। এজন্য টাকা অন্য কারো কাছ থেকে আনতে হবে না।

শ্রমিকদের টাকার সঙ্গে কিছু টাকা যোগ করলেই বাজেটে এ বরাদ্দ দিয়ে রেশনিং ও আবাসন সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা মিটে যাবে’।

‘শ্রমিকদের জন্য কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ এসব কথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ফেডারেশন।

বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যডভোকেট মাহবুবু রহমান। এছাড়া বিভিন্ন শ্রমিক জোট ও সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এম এম আকাশ বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই শ্রমিকদের কল্যাণ হচ্ছে না। সরকার ২০০৬ সালের নিজের করা শ্রম আইনের বাস্তবায়ন করছে না। তা না করে বলছে, শ্রমিকদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৪৩০ কোটি টাকা, তা কোথায় পাবো?’

আসন্ন বাজেটে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ছাড়া রেশনিং, আবাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ ৭ দফা দাবি করেছেন। শ্রমিকদের এ দাবির বিপরীতে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের দাবি মানতে হলে প্রয়োজন হবে ৪৩০ কোটি টাকা। এই অর্থ পাবো কোথায়?
 
এম এম আকাশ অর্থমন্ত্রীর দেওয়া এ তথ্য তুলে ধরে এর পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, রফতানি ক্ষেত্রে ১০০ ডলারের ৩ সেন্ট শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে জমা হওয়ার কথা। সেই হিসেবে এক অর্থবছরে জমা হবে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি। আসন্ন বাজেটে এই ৩৫০ কোটি টাকার সঙ্গে আর কিছু টাকা যোগ দিলেই শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব। এই টাকা কোথাও থেকে সংগ্রহ করতে হবে না। শ্রমিকদের টাকা শ্রমিকদের দিলেই ন্যূনতম দাবি মেনে নেওয়া যাবে। কারণ, শ্রমিকদের কল্যাণে কোনো অর্থই ব্যয় করা হয় না।

তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালে একবার সরকারের ন্যূনতম মজুরি চর্চা করেছিলাম। সরকারের প্রভিশন অনুযায়ীই করা হয়েছিল। একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ২ হাজার ১১২ কিলোক্যালোরি খাদ্য দরকার হয়। এই কিলোক্যালোরি যদি সবচেয়ে কম দামের খাদ্য দিয়ে পূরণ করতে চাই, তাহলে মাংস, মাছ বা ডিম না খেয়ে বা অন্য কোনো ডাল না খেয়ে শুধু খেঁসারির ডাল খেলে কতো টাকা হয়? এটি একটি অমানবিক চর্চা। এই খাদ্য থেকে গ্রামে তখন লাগতো একজনের জন্য ১ হাজার টাকা এবং শহরে এক হাজার ১০০ টাকা। একটি পরিবারে যদি স্বামী-স্ত্রী ছাড়া দু’জন শিশু থাকে, তাহলে গড়ে তিনজন ধরে খাবার খরচ লাগবে ৩ হাজার ৩০০ টাকা’।

‘এখন এটা যদি ধরে নেই যে, এটা সরকারের ২০০৬ সালের হিসেব। মূল্যস্ফীতি সূচকে যদি দেখি, তাহলে এখন হয়েছে দ্বিগুণ। তাহলে বর্তমানে হবে ৬ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু আমরা জানি মানুষ শুধু গবাদি পশুর মতো খেয়ে বাঁচে না, কাপড় লাগে এবং আবাসন লাগে। শহরে দুই হাজার টাকা বাসাভাড়া ধরলে এর পরেও যাতায়াত খরচ, লেখাপাড়ার খরচ ধরলে শ্রমিকরা কমই চেয়েছেন’।     

‘অন্যদিকে করফাঁকিসহ অন্যান্য দুর্নীতির কারণে ফ্লাইট অব ক্যাপিটাল প্রতি অর্থবছরে ৭৬ কোটি টাকা। শ্রমিক ও সরকারকে ফাঁকি দিয়ে অর্জিত এই হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ টাকা দেশে বিনিয়োগ করলে দেশে কোনো শ্রমিক বেকার থাকবে না’।
 
অধ্যাপক এম এম আকাশ জানান, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশের বাইরে চলে গেছে, গড়ে প্রতি অর্থবছরে ৬০০ কোটি ডলার। সর্বশেষ অর্থবছরে গেছে ৯৬৯ কোটি টাকা। এই টাকা দেশে বিনিয়োগ হলে ২৭ লাখ বেকার শ্রকিমের কর্মসংস্থান সম্ভব হবে। অথচ বেকার শ্রমিকরা খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন সমস্যায় রয়েছেন’।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৬
এসএমএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।