ঢাকা: সুশাসন ও আধুনিক ব্যবস্থাপনায় ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ আর ‘মাসিক রিপোর্ট কার্ড’ প্রচলন করায় রং বদলাতে শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
লাল, নীল আর হলুদ- এ তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছে এনবিআরের কর্মকর্তাদের।
মনিটরিং, নীতি আর রিপোর্ট কার্ডের ফলে রং বদলাতে শুরু করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। ফিরে এসেছে কাজের গতি। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সৎ কর্মকর্তারা। অন্যদিকে অসৎ, অদক্ষ কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগে কর্মসম্পাদন সংস্কৃতির ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। সেজন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো উদ্ভাবনীমূলক পদ্ধতিতে কাজ করছে।
রাজস্ব সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত এনবিআরেরও নিয়মিত খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর কর্মকর্তাদের পারফরমেন্সের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের তিনটি রঙে ভাগ করে কাজের মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
এর মধ্যে যারা রাষ্ট্রের জন্য নি:শর্তভাবে কাজ করেন তাদের বলা হয় ‘সবুজ রং’। অন্যদিকে রাজস্ব সংগ্রহে রাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধির প্রয়াস যারা চালান তাদের বলা হয় ‘হলুদ রং’।
রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল ও অসৎ ব্যবসায়ীদের কর ফাঁকিতে সহায়তা করেন যারা তাদেরকে ‘লাল রঙে’ চিহ্নিত করা হয়েছে।
‘এনবিআরে রং বদলানোর’ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীও অবগত। তবুও সম্প্রতি একনেক সভায় এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান তিনি।
তিনটি রঙের কর্মকর্তাদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেন,‘লাল রঙ হলুদ আর হলুদ সবুজ হচ্ছেন’।
প্রধানমন্ত্রী আগ্রহের সঙ্গে চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান, ‘তাহলে সবুজ রং কি হচ্ছেন?’। চেয়ারম্যান বলেন,‘সবুজ রং গাঢ় সবুজ হচ্ছেন। ’
প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি শুনে খুবই আনন্দিত হন। এ সময় সারা একনেক সভা কক্ষে মন্ত্রী, সচিব ও সরকারের ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তাদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়।
কর্মসম্পাদন সংস্কৃতির এ সময়ে এ ধরনের উদ্ভাবনীমূলক পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত সবাই এনবিআরের প্রতি প্রশংসাসূচক মনোভাব ব্যক্ত করেন।
‘রঙে’ বিভক্ত করা ছাড়াও কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা, সততা, শৃঙ্খলা, উদ্ভাবনী তৎপরতা, ভালো ব্যবহার মনিটরিংয়ে মাসিক ‘রিপোর্ট কার্ড’ চালু করেছে এনবিআর।
প্রতি মাসের রাজস্ব আদায়, করদাতার সঙ্গে ব্যবহার, আর্থিক সততা, পারদর্শিতাসহ আমলনামা মূল্যায়নে এ রিপোর্ট কার্ড চালু করা হয়েছে।
আয়কর, শুল্ক ও মূসক বিভাগের সদস্য থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে মাস শেষে এ রিপোর্ট কার্ড জমা দিতে হচ্ছে।
রিপোর্ট কার্ড মূল্যায়নের মাধ্যমে ইতোমধ্যে কয়েকশ’ কর্মকর্তাকে পুরস্কার হিসেবে যোগ্য জায়গায় বদলি ও অনেক কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে।
একনেক সভায় রং বদলানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জিজ্ঞাসা ও প্রশংসার কথা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
রং বদলানোর পেছনে রিপোর্ট কার্ড ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, রিপোর্ট কার্ডে পারফরমেন্সকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে গতানুগতিক তোষণ, মোসাহেবি সংস্কৃতি নেই।
এছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে রাজস্ব মনিটরিং, নিয়মিতভাবে মাঠ পর্যায়ে তদারকির ফলেও রং বদলাচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৬
আরইউ/এএসআর