ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পণ্য কিনতে দীর্ঘ অপেক্ষা, আসেনি টিসিবি’র ট্রাক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৬
পণ্য কিনতে দীর্ঘ অপেক্ষা, আসেনি টিসিবি’র ট্রাক ছবি: জি এম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে গ্রীষ্মের প্রখর রোদ মাথায় নিয়ে সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও খোঁজ নেই বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের(টিসিবি) পণ্যবাহী ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের।

বুধবার (০৮ জুন) দ্বিতীয় রমজানে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টিসিবি নির্ধারিত রাজধানীর আটটি বিক্রয় পয়েন্ট ঘুরে চোখে পড়েনি কোনো ভ্রাম্যমাণ ট্রাক। কিন্তু বিভিন্ন পয়েন্টে পণ্য কেনার জন্য অপেক্ষারত ক্রেতাদের দেখা গেছে।

পবিত্র রমজান উপলক্ষে গত ২৯ মে থেকে রাজধানীর ৩২টি পয়েন্টসহ সারাদেশের মোট ১৭৯টি পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পাঁচটি পণ্য  বিক্রি শুরু করে টিসিবি। নির্ধারিত পাঁচটি পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি ছোলা ৭০ টাকা, দেশি চিনি ৪৮ টাকা, মসুর ডাল ৯০ টাকা ও খেঁজুর ৯০ টাকা এবং সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

বুধবার সকালে মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বর গিয়ে দেখা যায় বাজারর ব্যাগ হাতে অপেক্ষা করছিলেন বিভিন্ন বয়সী নারী এবং পুরুষ ক্রেতারা।   কথা বলে জানা গেছে, তারা অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। বাজারদরের চেয়ে কিছুটা কম হওয়ায় প্রতিদিনই তারা এসে ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যান।

ক্রেতারা জানান, প্রতিদিনই ট্রাক আসে, কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট সময়ে আসে না। কোনোদিন সকাল দশটায় আসে,  কোনোদিন বা বেলা ১২টায়। কোনোদিন ১২টায় এসে দেখা যায়, পণ্য বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। কোনোদিন একই সময়ে এসে দেখা যায়, ট্রাক তখনও আসেইনি। এজন্য যেদিন পণ্য লাগে, সেদিন সকাল নয়টা থেকে এসে বসে থাকেন তারা।

কমলাপুর থেকে টিসিবি’র পণ্য কিনতে এসেছেন মধ্যবয়সী গৃহিণী আনোয়ারা বেগম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘সকাল নয়টা থেকে এসে বসে আছি। এখন দুপুর সাড়ে ১২টা। এখনও আসেনি ট্রাক। কখন আসবে, জানিও না’।

‘ট্রাক আসতে যদি বিকেল হয়ে যায়, তাহলে সিরিয়াল পেতে আরও দেরি হয়ে যাবে। এরপর কখন বাজার করবো, কখন তা নিয়ে রান্না করে পরিবারের জন্য ইফতারি তৈরি করবো?- প্রশ্ন করেন তিনি।

ভোগান্তি এড়াতে প্রতিদিন একটি নির্ধারিত সময়ে পণ্য বিক্রি শুরুরও দাবি জানান তিনি।

কোনো কোনো দিন লাইনে দাঁড়িয়েও কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন সোনালী ব্যাংক মতিঝিল শাখার কর্মচারী মোজাম্মেল হোসেন।

তিনি বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) আমি প্রায় ২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যখন ছোলা কিনতে চাই, তখন বিক্রেতারা জানান, ছোলা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি উঁকি দিয়ে দেখি, বস্তার মধ্যে ছোলা ঠিকই ছিল’।

বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে পণ্য থাকার পরেও বিক্রি না করারও অভিযোগ তোলেন তিনি।
 
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অপেক্ষারত বাসের ড্রাইভার আসলাম বলেন, ‘আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। রমজান এলেই বাজারে যেন আগুন ধরে যায়। এতো দাম দিয়ে পণ্য কেনার সাধ্য আমাদের নেই। কিছুটা সস্তায় পাওয়া যায় বলে সুযোগ পেলেই টিসিবি’র ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে আসি। কোনোদিন কিনতে পারি, কোনোদিন পারি না। বিক্রেতারা বলেন, মজুদ শেষ। তাই বাধ্য হয়েই বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয়। পরিবারের যা চাহিদা তার চেয়ে কম পণ্য নিয়েই বাসায় ফিরতে হয়’।

আসলামের দাবি, নিম্ম আয়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে এবং তাদের সিয়াম সাধনা নির্বিঘ্ন করতে সরকার টিসিবি’র মাধ্যমে আরও বেশি পণ্য বেশি পরিমাণে খোলা বাজারে বিক্রি করুক। এসব পণ্য বিক্রি এবং মজুদে পরিবেশকরা যাতে কোনো ধরনের দুর্নীতির সুযোগ না পান, সে ব্যাপারে নজর দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত মতিঝিলের, শাপলা চত্বর, দিলকুশা, বক চত্বর, দৈনিক বাংলার মোড়, সচিবালয়ের সামনে, জাতীয় প্রেসক্লাব, পলাশী বাজার এবং আজিমপুরের ছাপড়া মসজিদের সামনে ঘুরে এর প্রতিটি পয়েন্টেই বাজারের ব্যাগ হাতে ক্রেতাদেরকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কিন্তু চোখে পড়েনি কোনো পণ্যবাহী ট্রাকের।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৬
এসএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।