ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার: বিলাসবহুল লেক্সাস কিনে ধরা ব্যবসায়ী

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৬
কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার: বিলাসবহুল লেক্সাস কিনে ধরা ব্যবসায়ী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘আমি দু’বছর আগে ৭৫ লাখ টাকায় গাড়ি কিনেছি। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে রেজিস্ট্রেশনও নিয়েছি।

গাড়ি যে কার্নেট সুবিধার তা আমার জানা ছিল না’।  

না জেনে বিলাসবহুল লেক্সাস জিপ (আরএক্স-৩০০) কিনে ধরা খেয়ে এভাবে সহজ স্বীকারোক্তি দিলেন সিলেট সুনামঞ্জের একজন ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)।
 
শনিবার (২৫ জুন) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সুনামগঞ্জ থেকে কার্নেট সুবিধায় আমদানি করা বিলাসবহুল লেক্সাস জিপ (আরএক্স-৩০০) জব্দ করে। কাগজপত্র যাচাই শেষে রোববার (২৬ জুন) বিকেলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গোপন সংবাদে খবর আসে কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার করা লেক্সাস জিপটি সুনামগঞ্জে রয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা থেকে সোর্স দিয়ে চলে তিন সপ্তাহ ধরে নজরদারি।
 
সোর্সের তথ্য অনুযায়ী নিশ্চিত হওয়ার পর শনিবার শুল্ক গোয়েন্দার ঢাকা ও সিলেট আঞ্চলিক অফিসের ১২ জনের দুইটি টিম রওয়ানা হয় সুনামগঞ্জের দিকে।
 
ভোর ৬টার কাছাকাছি। এতো সকালে ব্যবসায়ীর বাসায় গেলে চোর ভেবে আক্রমণ করতে পারেন, কিন্তু গোয়েন্দা বলে কথা। সাহস করে ব্যবসায়ীর বাড়ি গিয়ে হাজির। সুনামগঞ্জ সদরের হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী গোয়েন্দা ডাকে সাড়া দিলেন। বলার পরপরই কোনো প্রকার উচ্চবাচ্য ছাড়াই তুলে দিলেন গাড়ি।  

ব্যবসায়ীকে শুল্ক গোয়েন্দারা আশ্বস্ত করলেন,‘আমরা গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। যাচাই শেষে যদি কার্নেট সুবিধার না হয় ফেরত দেওয়া হবে। রাজি হয়ে গেলেন ব্যবসায়ী’।
 
কোথা থেকে কিনেছেন, গোয়েন্দা প্রশ্নে ব্যবসায়ীর উত্তর,‘ দুই বছর আগে ৭৫ লাখ টাকায় সিলেটের এন কে করপোরেশন নামে এক গাড়ি বিক্রেতা থেকে কিনেছি’।
 
‘বিক্রির সময় দেওয়া কাগজপত্র দিয়ে কালো রঙের জিপটি সিলেট বিআরটিএ থেকে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে (সিলেট ঘ ১১-০৩০১),’ যোগ করলেন ব্যবসায়ী। শুল্ক গোয়েন্দা রেজিস্ট্রেশন নম্বর ধরে বিআরটিএ থেকে যাচাই করে এতে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিলে বিল অব এন্ট্রি সি ১১৪২৮৬ দেওয়া। এ বিল অব এন্ট্রি সি’র মাধ্যমে জাপান থেকে আমদানি তথ্যের ভিত্তিতে এ রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। যদিও এ নামে বিল অব এন্ট্রি সি পাওয়া যায়নি।
 
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে যোগাযোগ করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। জানতে পারেন, এটি একটি পোশাক রফতানিকারকের শিপমেন্ট। এ নম্বরে কোনো গাড়ি আমদানির রেকর্ড নেই।

তাহলে স্পষ্ট, আমদানির ভুয়া ও জাল বিল অব এন্ট্রি সি কাগজপত্র তৈরি করে বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হয়েছে!
 
ব্যবসায়ীকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ। উত্তরে তিনি বলেন,‘আমি সহজ-সরল মানুষ। কাগজপত্র যাই দিয়েছে তা দিয়েই তো রেজিস্ট্রেশন করেছি। ভুয়া হলে রেজিস্ট্রেশন দিলো কীভাবে?’
 
বিআরটিএ’তে খোঁজ নিলে কর্তৃপক্ষের স্বীকারোক্তি, যাছাই করা উচিত ছিল। কিন্তু কাগজ দেখতে হুবহু আসল, যার কারণে যাচাই হয়নি। ভবিষ্যতে এমন হবে না।

সুনামগঞ্জ থেকে গাড়ি নিয়ে আসার পর চলে কার্নেট গাড়ির তালিকা যাচাই। এতে দেখা যায়, একই চেসিস ও মডেলের গাড়ি ২০১০ সালে দেশে প্রবেশ করে। ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর লন্ডনের রুপা মিয়া নামে একজন প্রবাসী কার্নেট (নম্বর ডিডিওয়াই-৬৪১৬১৯) বিনাশুল্কে গাড়িটি ছাড় করেন।
 
রুপা মিয়ার ব্রিটিশ পাসপোর্ট নম্বর-১০৮৭৯৩২০৩ (ইস্যু ১৪/০৩/২০০৭)। গাড়ির চেসিস নম্বর JTJHF31U900023634।

২০০৪ সালের মডেলের লেক্সাস আরএক্স-৩০০ ২৯৯৫ সিসির ও শুল্কসহ গাড়ির মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। বর্তমানে গাড়িটি সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।

রুপা মিয়া, এন কে করপোরেশনের সঙ্গে আর কারা জড়িত অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ড. মইনুল খান।
 
শুল্ক গোয়েন্দার সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের আগে ১৯ এপ্রিল কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার করা লেক্সাস ব্রান্ডের আরও একটি গাড়ি জব্দ করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৬
আরইউ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।