সংসদ ভবন থেকে: প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাস হলো ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট। সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট পাস করে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বিকেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন অর্থ বছরের বাজেট পাসের প্রস্তাব করেন।
বাজেটের উপর ৫৫টি দাবির বিপক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মোট ৪২০টি ছাটাই প্রস্তাব আনা হয়। এতে বিরোধী দল জাতিয় পার্টির ৬ জন এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ৩ জন আলোচনা করেন। মোট ৭টি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয় বাকীগুলো সরাসরি ভোটে গৃহিত হয়।
এরআগে বেলা ১টা ৩২ মিনিটে স্পিকারের ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়।
স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট পাস হয়। এসময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে ২ জুন সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এরপর ৮ জুন থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের সাধারণ আলোচনায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্যরা পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তিতর্ক উত্থাপন করেন।
এরপর ২৯ জুন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে রফতানি খাতে উৎস কর কমানো হয়। এর বাইরেও কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়।
এটি ছিলো অর্থমন্ত্রী আবুল মালু আবদুল মুহিতের দশম বাজেট এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ৮ম বাজেট। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেটও এটি। এ বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ধারাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের নীতি নির্ধারক সংসদ সদস্যরা।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরের পাস হওয়া বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর ব্যবস্থা থেকে আদায় করা হবে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা।
এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা এবং করবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। বিদেশি অনুদান ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। এ অনুদান পাওয়া গেলে সরকারের মোট আয় হবে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে মোট অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় হবে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। এ অনুন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ দেওয়া হবে ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। মূলধনী ব্যয় ২৬ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। ঋণ ও অগ্রীম বাবদ ব্যয় হবে ৮ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।
এছাড়া উন্নয়ন ব্যয় করা হবে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের অর্থায়ন ৭০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা নেওয়া হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত প্রকল্প ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা।
জিডিপির ৫ শতাংশ ধরেই ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী বছরে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ হচ্ছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা (অনুদান ছাড়া)। তবে বিদেশি অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র খাত থেকে নেওয়া হবে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক উৎসের মধ্যে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে আগের নেয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ হচ্ছে ৮ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
এসকে/এসএম/এসএইচ
** বাজেটে অধিবেশনে টানা ১৬ দিনের বিরতি
**দেশে অবৈধ বিদেশি নাগরিক ৯১০ জন
** ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার নির্দষ্টকরণ বিল পাস
** ‘হাত তুললে চাকরি যাবে না’
** ব্যাংকিং খাত নিয়ে সংসদে সমালোচনার মুখে অর্থমন্ত্রী