ঢাকা: বাংলাদেশের সমুদ্রগামী, উপকূলবর্তী ও অভ্যন্তরীণ সকল জাতীয় নৌ-যান এবং যন্ত্রচালিত বোটের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। বাংলাদেশের সকল নৌ-যান ও বোটের হালনাগাদ পরিসংখ্যান তৈরির পাশাপাশি অনিবন্ধিত নৌ-যান ও বোটকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।
উপকূলবর্তী জেলাগুলোর কিছু নৌ-যান ও বোট নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে এই সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। এবার উপকূলের কিছু জেলা বাদ দিয়ে সারা দেশের সকল নৌ-যান ও বোট নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর সূত্র জানায়, নদীপথে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন নিবন্ধিত সকল নৌ-যানের অবস্থা যাচাই করা হবে। যন্ত্রচালিত বোটের ক্রুদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নৌ-যান নির্মাণের ডিজাইনের অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতির আধুনিকায়নের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালী জেলা ছাড়া বাকি ৫৮টি জেলায় এ উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতে প্রায় ৪৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় করবে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর।
সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর সূত্র জানায়, এ উদ্যোগ সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ৩ হাজার ২৬৪ জন স্থানীয় পরামর্শকের পাশাপাশি ৯ হাজার ৬০০ জনকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। জাহাজের অবস্থা নির্ণয়ে থাকছেন ৩০ হাজার কর্মী। এর পাশাপাশি তিনটি গাড়ি, অফিস ফার্নিচার ও প্রয়োজনীয় অফিস ইক্যুইপমেন্ট কেনা হবে।
সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্রোসিকিউটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন কর্মকর্তা পারভিন সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে নৌ-পথে কি পরিমাণে নৌ-যান ও বোট চলাচল করে তার সঠিক তথ্য আমাদের হাতে নেই। হালনাগাদ তথ্য বের করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করবো। ফলে নৌ-পথে দুর্ঘটনা কমে আসবে’।
সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সমুদ্র তীরবর্তী ও নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় অনেক নৌ-যান চলাচল করে। বাংলাদেশের দুই শতাধিক নদী আছে। দেশে অনেক খাল-বিল হাওর রয়েছে, যেখানে অসংখ্যা নৌ-যান চলাচল করে। অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী নৌ-যান অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এবং এর অধীনে প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর দেশের অভ্যন্তরীণ চলাচলকারী নৌ-যানের রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থা।
কিন্তু কোনো রেজিস্ট্রেশন ও জরিপ ছাড়াই অনেক নৌ-যান চলাচল করে থাকে। অভ্যন্তরীণ ও উপকূলবর্তী নৌ-পথে কতো সংখ্যক রেজিস্ট্রেশনবিহীন নৌ-যান চলাচল করছে, তারও কোনো পরিসংখ্যান নেই।
অনিবন্ধিত নৌ-যান ও বোটের অপারেটর ও ক্রুরা যথাযথ প্রশিক্ষিত নন। তারা অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন না জানার কারণে নৌ-যানগুলো নিরাপদ নৌ-পথে চলাচলের হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ জাহাজ ও বোটের প্রকৃত কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় একটি যথাযথ পরিকল্পিত নিরাপদ প্রশাসন তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।
অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব নৌ-পরিবহন ব্যবস্থার সমন্বিত গাইডলাইন তৈরির জন্য সকল নৌ-যানের পরিসংখ্যান থাকা জরুরি বলে মনে করে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর।
সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর সূত্র জানায়, সকল নৌ-যান ও বোটগুলো রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হলে দুর্ঘটনাও কম হবে। এছাড়া সরকার রেজিস্ট্রেশন ফি, সার্ভে ফি, ইনকাম ট্যাক্স থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারবে। অন্যদিকে নৌ-দুর্ঘটনার হার কমানোর জন্য জাহাজ নির্মাণের নকশা পদ্ধতির উন্নয়নে আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে।
এ লক্ষ্যে চলতি সময় থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যেই বাংলাদেশের সকল নৌ-যান এবং বোটের হালনাগাদ সংখ্যা ও পরিসংখ্যান করা হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) জিকরুর রেজা খানম বাংলানিউজকে বলেন, ‘পরিসংখ্যান না থাকায় সরকার প্রতি বছর নৌ-পরিবহন খাতে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আমরা কম সময়ের মধ্যে দেশের সকল নৌ-যান ও বোটের নিবন্ধন করতে চাই। এতে করে একদিকে যেমন কমে আসবে নৌ-দুর্ঘটনা, অন্যদিকে তেমনি নৌ-যানের সঠিক পরিসংখ্যানও থাকবে আমাদের হাতে’।
তিনি আরও বলেন, ‘উপকূলবর্তী জেলার কিছু নৌ-যান ও বোট নিবন্ধন করা আছে। এবার সারা দেশের সমস্ত নৌ-যান ও বোট নিবন্ধনের আওতায় আনবো’।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর