ঢাকা: জয়দেবপুর, শ্রীপুর, কোনাবাড়ী, চন্দ্রা, গোড়াই, ঢাকা, ইপিজেড ও টঙ্গী এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ নির্মাণ করছে ওয়াসা। কিন্তু প্রাক্কলিত ব্যয় অনুযায়ী গ্যাস পাইপ নির্মাণে কোনো দরদাতা মেলেনি।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্র জানায়, গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্তমানে জয়দেবপুরে গ্যাস প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য আশুগঞ্জে (ধনুয়া) ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের সঞ্চালন লাইন আছে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) এই লাইনটির সীমানা শ্রীপুরের গারারান পর্যন্ত। এখান থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত একই ব্যাসের ৩০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ নির্মাণ করার কথা।
প্রথমে পাইপ লাইন নির্মাণের জন্য ২০ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণসহ দরপত্র অনুমোদন করা হয়। এ অনুমোদন অনুসারে পর পর দু’বার দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় দরপত্র আহ্বানে সর্বনিম্ন দরদাতার দর ছিল প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে যথাক্রমে ৪৮ দশমিক ৮০ শতাংশ ও ৪৬ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় আহ্বানে সর্বনিম্ন দর প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে ৪৬ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি হওয়ায় দরপত্র কমিটি পুন:দরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করে।
জিটিসিএল সূত্র জানায়, দরপত্র কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পাইপ লাইন নির্মাণ খাতে প্রাক্কলিত মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ফলে এ খাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ১০ শতাংশ অপ্রত্যাশিত ব্যয়সহ ২৯ কোটি ৩২ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
এরপর ২০১৫ সালে পাইপ লাইন নির্মাণের জন্য পাঁচটি দরপত্র জমা পড়ে এবং দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কাছে পাঁচজন দরদাতাই কারিগরিভাবে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করে। পাঁচজন দরদাতার মধ্যে সর্বনিম্ন গ্রহণযোগ্য দরদাতা মেসার্স পাইপ লাইনার্স লিমিটেড। কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দর ছিল ২৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা যা প্রাক্কলিত মূল্য থেকে ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন গ্রহণযোগ্য দরদাতার প্রস্তাব গ্রহণ করে।
গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণের জন্য তিনবার দরপত্র আহ্বানের কারণে ইতোমধ্যে যথেষ্ট সময় অতিবাহিত হয়েছে। যে কারণে সময় ও বৃদ্ধি পায় গ্যাস পাইপ নির্মাণ কাজের।
২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে গ্যাস পাইপ নির্মাণ করার কথা ছিল। এর পরে ব্যয় বৃদ্ধিসহ পাইপ লাইন নির্মাণের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত।
এ বর্ধিত সময়ে ৩০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। আশা করি বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হবে’।
‘এছাড়া পাইপ লাইন নির্মাণে ২০ একর ভূমির বেশি প্রয়োজন হচ্ছে। মূল অনুমোদিত প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ও ভূমি অধিযাচন বাবদ ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা সংস্থান ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ কোট ২ লাখ টাকা এবং ভূমি অধিযাচন বাবদ ১০ কোটি ৯ লাখ টাকা। যা মূল ব্যয়ের চেয়ে ভূমি অধিগ্রহণে ১০৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও ভূমি অধিযাচনে ৯৩ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি’।
৩০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ নির্মাণের স্থলে ২৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার নির্মাণের প্রয়োজন হবে। তবে এখনও পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে মাত্র ১৮ কিলোমিটার।
প্রকল্প পরিচালক আবদুল ওহাব তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘৩০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ নির্মাণের মধ্যে ১৮ কিলোমিটারের কাজ হয়ে গেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাক্কলিত ব্যয়ে দরদাতা পাওয়া যায়নি। তবে দরদাতা পাওয়ার পরে পুরো দমে কাজ চলমান আছে। আশা করছি, ২০১৭ সালের জুনের আগেই প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারবো’।
‘ভূমি অধিগ্রহণে সমস্যা দেখা না দিলে আরও আগে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হতো। জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে পাওয়া দরের ভিত্তিতে এ দু’টি অঙ্গের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। সরকারি জমিতে কিছু অবৈধ স্থাপনাও সরাতে হয়েছে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর