গোদাগাড়ীর চব্বিশনগর (রাজশাহী) থেকে ফিরে: মূল ফটকের বাইরে নির্দেশনা রয়েছে ‘অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ। আপনার পরিচয় দিন।
চার কদম এগিয়ে মূল ফটকের কাছে গিয়ে আওয়াজ দিতেই পকেট জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে নিরাপত্তা প্রহরীর প্রশ্নবাণ। পরিচয় জানার পর ভেতরে বড় কর্তার কাছে ফোন। তার পর নাম-পরিচয় মোবাইল নম্বর ইত্যাদি লেখার পালা। অবশেষে ১৫ মিনিট পর মিললো কারখানার ভেতরে ঢোকার অনুমতি।
সম্প্রতি ফ্যাক্টরিটিতে অভিযান চালিয়ে পচা আম দিয়ে জুস তৈরির প্রমাণ পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। করা হয় জরিমানা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযানের পর থেকেই বন্ধ রয়েছে ফ্যাক্টরিটি। পচা আম তো দূরের কথা সেখানে এখন আমের আটিও নেই।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চব্বিশনগরে অবস্থিত সেজান জুস তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে এমনই দৃশ্য। কর্মকর্তারা জানালেন, এ মৌসুমে আর উৎপাদনে যাবে না সেজানের এ ফ্যাক্টরিটি।
ফ্যাক্টরিতে ঢুকতেই নাকে বাধে কটু গন্ধ। চারপাশেই তার বিস্তৃতি। কারণ জিজ্ঞেস করতেই নিরাপত্তা প্রহরীরা বলেন, ‘আম প্রসেসিং করার পর চারপাশে ‘ডাস্ট’ ফেলায় এ দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। ’
তবে ওই এলাকার আবদুর রশীদ বলেন, এটা পচা আমের গন্ধ। আশপাশের কাউকে ভুল করেও কোনো দিন ওই ফ্যাক্টরির ভেতরে যেতে দেয় না কর্তৃপক্ষ। তার দাবি, শহরে বা উপজেলা সদরে ফ্যাক্টরিটি থাকলে পচা আমের জুস তৈরি সম্ভব হতো না বলেই এই অজ পাড়া গাঁয়ে কারখানা করেছে সেজান কর্তৃপক্ষ।
উপজেলার চব্বিশনগর এলাকার অপর অধিবাসী সেরাজুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের নজর এড়াতেই সেজান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম এগ্রো প্রসেসিং লি. এই ফ্যাক্টরিটি এখানে তৈরি করেছে।
গত বৃহস্পতিবার ( ২১ জুলাই) চারটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলিতে থাকা পচা আমের চালানটি প্রথম ধরা পড়ে উপজেলার সারেংপুর এলাকায়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে পচা আমগুলো নেওয়া হচ্ছে সেজানের ফ্যাক্টরিতে। পরে সেখানেও অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ পচা আমের সন্ধান পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপরই উদঘাটন হয় ফ্যাক্টরির ভেতর জুসের বদলে আসলে কি তৈরি হচ্ছে।
তবে আশপাশের গ্রামের মানুষ এখানে তৈরি জুস তাদের সন্তানদের কিনে দেন না বলে জানান সেরাজুল।
পচা আম দিয়ে জুস তৈরির প্রশ্নে ফ্যাক্টরিটির ব্যবস্থাপক নূরুল করিম বলেন, জুস নয় এখানে আমের ‘পাল্প’ তৈরি করা হয়। তবে এ পাল্প দিয়েই ঢাকায় জুস তৈরি করা হয়। জুস ছাড়াও এখানে টমেটো ক্যাচাপ ও কুলসন সেমাই তৈরি করা হয়। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও জরিমানার পর বর্তমানে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ মৌসুমে আর উৎপাদনের সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১২ সালে প্রায় ১২ বিঘা জমির উপর ফ্যাক্টরিটি তৈরি করা হয়। শুরু থেকেই তিনি এখানকার ব্যবস্থাপক।
তিনি দাবি করেন, আমগুলোর মাণ নির্ণয়ের আগেই ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালায় এবং তাদের জরিমানা করে।
উল্লেখ্য, পচা আম দিয়ে জুস তৈরির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সেজান জুসের এই ফ্যাক্টরিটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় দুর্গন্ধযুক্ত ৪শ’ মণ পচা আম। পরে তা ধ্বংস করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৬
এসএস/আরআই