ঢাকা: ‘আমরা অফিস করছি, কারখানা চলছে, ব্যবসাও স্বাভাবিক’ বলে সরকারকে জানালেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘০১ জুলাইয়ের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ, এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেশে প্রথম ছিল। কিন্তু বিশ্ব দেখেছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কতো ত্বরিত কঠোরতার সঙ্গে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। এমন একটি ঘটনায় তিন বাহিনীর প্রধানরা এক জায়গায় গিয়ে পরিস্থিতি সামলালেন। বিশ্ব দেখেছে, এ ধরনের ঘটনায় আমাদের সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্বনেতারা প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ফোন দিয়ে সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেছেন’।
তিনি বলেন, ‘ফলে এ ধরনের ঘটনা আমাদের ব্যবসায় কোনো প্রভাব ফেলেনি। গুলশান কাণ্ডের পরও জাপানিরা আমাদের দেশে এসেছেন। তারা ইকোনিক জোন নিয়ে কাজ করছেন। অন্য দেশের লোকেরাও আসছেন। ভারতীয়রা এখানে কাজ করছেন। এসব কথা আমাদের মিডিয়ায় তুলে ধরতে হবে’।
‘হলি আর্টিজানের ঘটনায় বিদেশি মিডিয়া আমাদের যে ক্ষতি করেছে, তা মোকাবেলা করতে হবে আমাদের মিডিয়াকে। কারণ, দেশটা আমাদের, বিদেশিদের না। বর্তমানে মিডিয়াও প্রাইভেট সেক্টরের। তবে বিদেশে কিন্তু একটা ম্যাসেজ ঠিকই পৌঁছে গেছে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদীদের স্থান হবেনা’।
বিদেশি বন্ধুদের সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান তিনি।
বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মঈন উদ্দীন আহমেদ মিন্টু বলেন, ‘আমাদের দরকার সরকারের রেসপন্স। এ রেসপন্স পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার, পাবলিক সেক্টর, প্রাইভেট সেক্টর ও মিডিয়া সবাইকে দেখাতে হবে। আমাদের গাজীপুরে ১০ হাজার বিদেশি কাজ করেন। আমরা তাদের বলেছি, আমরা তাদের পাশে আছি। প্রশাসন তাদের নিরাপত্তার উদ্যোগ নিয়েছে। মিডিয়াকেও তাদের অভয় দিতে হবে’।
বিকেএমইএ’র সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকই আছে। আমরা আমাদের বায়ারদের ঠিকই রেসপন্স পাচ্ছি। তারা অর্ডার দিচ্ছেন। যারা ব্যবসা চলে যাবে বলে হুজুগ তুলছেন, মায়াকান্না করছেন, তারা নিজেরাই ব্যবসা চলে যাওয়ার পক্ষে কি-না ভেবে দেখতে হবে। এখন দায়িত্ব নিতে হবে, এটা নিয়ে রাজনীতি চলবে না। ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে, দেশের স্বার্থে, কোনো সরকারের পক্ষে নয়’।
ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কল্যাণপুরের মতো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলে বিদেশিরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন। এমনিতেই সকল বায়ার জোট এরই মধ্যে জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের ব্যবসা বন্ধ করবে না’।
বিটিএমইএ’র সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা যেকোনো দেশ ও সমাজের জন্য কষ্টের। তবে আমরা জাতি হিসেবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। কষ্ট হয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কথা চিন্তা করে। ব্যবসা তো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেই। তবে তা ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ, আমরা সঠিক পথেই আছি। আমাদের মোকাবেলা করার কৌশলই আমাদের বাঁচিয়ে দেবে’।
ব্যবসায়ী জোটের প্রধান সালমান এফ রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘ব্যবসা বন্ধ হয়নি। তবে বায়াররা আসতে ভয় পাচ্ছেন। তারা তৃতীয় দেশে আমাদের যেতে বলছেন। তবে আমরা তাদের নিরাপত্তার কথা বলে আসতে বলছি। পুলিশ বিমানবন্দর থেকে তাদের হোটেল এবং কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকলে সহসাই কালো মেঘ কেটে যাবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
আরএম/এএসআর