ঢাকা: সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পের। শুরু থেকেই বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ।
বুড়িগঙ্গা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করে নাব্যতা বজায় রাখা, পানির গুণগতমান বৃদ্ধি, নৌ-চলাচল অব্যাহত রাখা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নতমানের উদ্দেশ্যে ২০১০ সালে শুরু হয়েছিল প্রকল্পের কাজ।
২০১০ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে ৯৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মেয়াদ শেষে বাস্তবায়িত না হওয়ায় নিউ ধলেশ্বরীর উৎস মুখে নানা অবকাঠামো অপসারণের কথা মাথায় রেখে নতুন ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করা হয়।
এর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নতুনভাবে গত ১৪ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি আবারও অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে করে প্রকল্পের সময় বেড়ে দাঁড়ায় ২০২০ সাল জুন পর্যন্ত। একই সঙ্গে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা।
এখন মেয়াদ ঠিক রেখে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান পরিকল্পনা বিভাগের সচিব তারিক-উল-ইসলামের কাছে ডিও লেটার (আধা-সরকারি পত্র) পাঠিয়েছেন।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব তারিক-উল-ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারে মোট ২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা চেয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ডিও লেটার আমাদের হাতে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবো। হয়তো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) থোক বরাদ্দ থেকে বাড়তি চাহিদা মেটানো হবে। কিন্তু অতিরিক্ত অর্থায়ন করেই বা কি করবো? পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়তো অনেক সময় এডিপি বরাদ্দের টাকাই খরচ করতে পারে না’।
ডিও লেটারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান উল্লেখ করে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যথাযথ অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে নদীর মারফলোজি পরিবর্তিত হওয়ায় যমুনাতে প্রায় এক কিলোমিটার চর সৃষ্টি হয়েছে। অত্যধিক পলি বহন করায় প্রকল্পের টাঙ্গাইল অংশে আগের বছর যা খনন করা হয় পরবর্তী বছরে ভরাট হয়ে যায়। ফলে নিউ ধলেশ্বরী অফটেক থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভাটি পর্যন্ত দৈর্ঘ্য পলি ভরাটের পরিমাণ অত্যধিক’।
‘প্রকল্পের অগমেন্টেশন রুট বরাবর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থার প্রায় ২২টি সেতু থাকায় নদী খননের ফলে এসব সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ড্রেজিংকৃত অংশ পলি ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য অধিক বরাদ্দ দরকার’।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অন্য প্রকল্পের তুলনায় এটি আলাদা। দ্রুততার সঙ্গে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা জরুরি। দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্পটি সম্পন্ন না করা গেলে কাজের সফলতা পাওয়া যাবে না। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যের কাজ শেষ করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন।
জিওবি অর্থের পাশাপাশি প্রকল্প সাহায্যের জন্য ইতোমধ্যেই চায়নিজ যৌথ কনসোর্টিয়াম অ্যাভাইস ইঞ্জিনিয়ার এবং সিএইচডাব্লিউই’র সঙ্গে ২০১৫ সালে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চায়নিজ কোম্পানিটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে সমীক্ষা প্রতিবেদনও দাখিল করেছে।
সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবের ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে যমুনা নদী থেকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ৩০০ কিউসেক পানি আনতে হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. মোহাম্মদ আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, একনেকে যে অর্থ পাস হয়েছে, তা দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। আমাদের আরও অর্থের প্রয়োজন। এতো অর্থায়ন করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমাদের ডোনার দরকার। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দিয়েছি’।
বিপুল অর্থের চাহিদা পূরণে চীন সরকার থেকে স্বল্প সুদে অর্থ সহায়তা পাওয়া যাবে বলে জানায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর