ঢাকা: অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের রিটেইল চেইন সুপার শপ মীনাবাজারের আউটলেট। চেইনশপটির মাছ ও মাংস বিক্রির স্থানে সাদা কাচের উপরে সাঁটানো স্লোগান:“জীবনে আনে সজীবতা প্রতিদিন ’’।
হিমায়িত নয়, বরং রোববারে জবাই করা গরুর সতেজ মাংস চাই এই ক্রেতার। কিন্তু চেইনশপের সেলসম্যান আল আমিন বলেন, ‘‘রোববারে গরু জবাই করা হয়নি। তাই অন্যদিনের মাংস রাখা হয়েছে। ’’
কাছে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জানতে পারলাম সতেজ মাংস না পেয়ে ফিরে যাওয়া ক্রেতার নাম সাইদুর রহমান। তিনি মোহাম্মদপুর কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের বাসিন্দা।
সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘আজকের(রোববার) টাককা গরুর মাংস কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু মীনাবাজারে এসে দেখি কয়েকদিন আগের বাসি মাংস রাখা ফ্রিজে। এই মাংসের কোনো স্বাদ নেই। তাই মনে করলাম কাঁচাবাজারে গিয়ে টাটকা মাংস কিনবো। ’’
মাংস হিমায়িত করার নিয়ম না থাকলেও প্রতিনিয়ত ক্রেতা ঠকাচ্ছে মীনাবাজার। অথচ এই অপরাধে ভোক্তা আইনের ৪৩ ধারা অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল এই চেইন শপকে।
হিমায়িত পচা মাংস ও মাছ বিক্রির পক্ষেই সাফাই গেয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের উপর ক্ষোভ ঝাড়লেন মীনাবাজার আউটলেট ইন-চার্জ রুপম রায়। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘‘অভিযানের নামে বারবার আমাদের জরিমানা করা হচ্ছে। অভিযানকারীরা মীনাবাজারে এসে কোনো না কোনো সমস্যা বের করবেই। শুধু জরিমানা করার জন্যই আমাদের নামে অভিযোগ করা হয়। ’’
হিমায়িত মাংস বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সবাই হিমায়িত মাংস খায়। এই মাংস তো পচা নয়। যেসব ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের জরিমানা করেন, তাদের বাসার ফ্রিজেও হিমায়িত মাংস পাওয়া যাবে। ’’
মীনা বাজারের অধিকাংশ আউটলেটেই হিমায়িত বাসি-পচা মাছ, মাংস ও কিমা বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। এরপরও অফিস ও বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেওয়ার তাড়ার কারণে দ্রুত সময়ে সতেজ পণ্য পেতে এসব চেইনশপে এসে ঠকছেন ক্রেতারা। তাদের মধ্যে একজন ধানমণ্ডি ১৫ নম্বারের বাসিন্দা ও বুটিকস ব্যবসায়ী রূপা ভৌমিক।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘মীনাবাজার ও আগোরা অধিকাংশ সময় পচা মাছ-মাংস বিক্রি করে। এসব চেইনশপ থেকে একবার চিকেন কিমাও পচা পেয়েছিলাম। মীনাবাজার ভালো পণ্য দেয়ার নামে ক্রেতার পকেট কাটছে। ’’
তারপরও মীনাবাজার থেকে নিত্যপণ্য কেনা প্রসঙ্গে রুপা বলেন, ‘‘আমি ব্যবসায়ী মানুষ। সব সময় ব্যবসা ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। কাঁচা বাজারে গিয়ে দরদাম করে নিত্যপণ্য কেনা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। একটু নিরাপদ ও ভালো পণ্য কেনার আশায় মীনাবাজারে আসি। কিন্তু এরাও আমাদের প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছে। পচা ও বাসি মাছ, মাংস ও চিকেন কিমা আমাদের কাছে বিক্রি করছে। ’’
বাজার মনিটরিং টিম পরিচালনার জন্য এ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর শুধু নামকাওয়াস্তে রোটিন মাফিক কাজ করছে। এসব সরকারি সংস্থা অভিযান ও জরিমানা আদায়ের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে। ফলে প্রতিনিয়তই ক্রেতা ঠকিয়ে যাচ্ছে মীনাবাজারের মতো চেইনশপগুলো।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক(অতিরিক্ত সচিব) শফিকুল ইসলাম লস্কর বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আমরা প্রতিনিয়তই বাজার মনিটরিং ও অভিযান পরিচালনা করছি। ভেজাল খাদ্য পরিবেশন করলেই আমরা জরিমানাসহ অ্যাকশনে যাচ্ছি। নানা ধরণের সচেতনামূলক কার্যক্রমসহ ফেস্টুন বিল করছি। ’’
‘‘অভিযান ও জরিমানা করার বাইরে নতুন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে কি?’’-- এ প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, ‘‘আমাদের মনিটরিং থেমে নেই। কোনো ক্রেতা যদি আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন, তবে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নেব। ’’
পচা মাছ-মাংস বিক্রির পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দামও চড়া মীনাবাজারে। যেমন, বড় সাইজের রু্ই মাছের দাম দুই ধরনের। প্রতিকেজি বড় রুই মাছের দাম ৬৮০ ও ৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
একই পণ্যের দুই ধরনের দাম রাখা প্রসঙ্গে মীনাবাজারের সেলসম্যান আল আমিন বলেন, ‘‘একটা দাদা(বড় সাইজ)। অপরটি দাদারও দাদা। যে কারণে বড় দুই ধরনের রুই মাছের দাম ৬৮০ এবং ৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ’’
অথচ নগরীর জগন্নাথপুর কাঁচা বাজারে মাছ বিক্রেতা হেমন্ত পাল তাজা বড় সাইজের রুই মাছ বিক্রি করছেন মাত্র ৪০০ টাকা কেজি দরে। অথচ মীনাবাজার মরা ও পঁচা মাছ বিক্রি করে কেজি প্রতি ৭৫ থেকে ২৮০ টাকা বেশি আদায় করছে।
পচা-বাসি পণ্য বিক্রয় করা এখন নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মীনাবাজারে। অভিযোগ আছে, বিএসটিআই’র মানচিহ্ন(লোগো) ব্যবহার করে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সংরক্ষণ, বিক্রি ও বিতরণ করছে চেইনশপটি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৬
এমআইএস/জেএম
** লোকসানে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক আউটলেট