ঢাকা: এক সপ্তাহের পুরোনো মাছ ও বাসি মাংস, তরকারি বিক্রি করছে উত্তরার মীনাবাজার আউটলেট। এই এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান হয় না বলে অনিয়ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে তারা।
প্রতিষ্ঠানটির শাখা ব্যবস্থাপকরা জানান, এখন পর্যন্ত ভ্রাম্যমান আদালত উত্তরায় তাদের আউটলেটগুলোতে কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। উত্তরার বাইরে মীনাবাজারের অন্যসব শাখায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান সম্পর্কেও তাদের কোনো ধারণা নেই।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মূল কোম্পানি জেমকন গ্রুপের নির্দেশনা রয়েছে নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বিক্রির দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান ও জরিমানা সম্পর্কে কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলতে। তাদেরকে জেমকনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবে সেসব নির্দেশনাকে তারা ‘একান্ত গোপনীয়’ বলে অবহিত করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ২ দিন আগেও হিমায়িত মাংস বিক্রির দায়ে ধানমণ্ডি আউটলেটকে ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করলেও উত্তরা ১১ নাম্বার সেক্টর ও ১৪ নাম্বার সেক্টরের আউটলেটে গিয়েও মিলেছে হিমায়িত মাংস। নিম্নমানের ফ্রিজারে দিনের পর দিন মাছ ও মাংস জমিয়ে রেখে তা বিক্রির অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
উত্তরা ১২ নাম্বার সেক্টরের ১ নং সড়কের ১৬ নাম্বার বাড়ির বাসিন্দা রবিউল হক। মীনাবাজারের উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর আউটলেটের পাশেই ভ্যান থেকে মাছ ও সব্জি কিনছেন।
এর কারণ সম্পর্কে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘এক সময় মীনাবাজারের বিজ্ঞাপনের ভাষা দেখে তাদের ‘নিজস্ব প্রডাক্ট’ এই বিশ্বাসে মাছ কিনে ঠকেছি। পুরো মাছ পচা হওয়ায় তা ফেলে দিতে হয়েছে। তারা যে সব্জি বিক্রি করেন তাও মানসম্মত নয়। হয় পচা না হয় বাসি। ’’
এই আউটলেটে গিয়ে বরফজমাট খোলা মাংস দেখা গেল। আবার সংরক্ষিত মাংসের ছোট ছোট প্যাকেটের গায়ে চোখে পড়লো মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লেখা আছে ৮ আগস্ট। এ শাখার নির্বাহী রাজিব জানালেন, সাধারণত সংরক্ষিত মাংসের কোনো মেয়াদ নির্দিষ্ট করা থাকে না। বাসায়ও সবাই ফ্রিজে মাংস রেখে খায়। তারপরও ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করেন। তবে জেমকন থেকে এ পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশল শেখানো হয়েছে। যা বলা যাবে না।
একটি মাংসের প্যাকেট হাতে নিয়ে দেখা গেলো মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা স্ট্রিপের নিচে আরো অন্তত তিনটি স্ট্রিপ লাগানো। আউটলেট নির্বাহী জানান, কোম্পানির সকল নিয়ম নিয়ন্ত্রিত হয় প্রতিষ্ঠানের মূল কোম্পানি জেমকন গ্রুপ থেকে। কিছু জানতে হলে হেড অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
উত্তরায় মীনা বাজারের আরো একটি আউটলেট আছে ১১ নম্বর সেক্টরে। এই আউটলেটের নির্বাহী জুয়েল বাংলানিউজকে জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান ও পণ্যের মান সম্পর্কে কোনো কথা বলতে মানা আছে তাদের।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত অসৎ সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কম দামে নিন্মমানের পণ্য কেনে মীনাবাজার। আর এর মাধ্যমে কোম্পানির এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা মোটা অংকের কমিশন খেয়ে কোম্পানির সুনাম নষ্ট করছেন।
এই আউটলেটেই দেখা গেল এক সপ্তাহের পুরনো ফ্রোজেন মাছ ও ২দিনের বাসি মাংস বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। যদিও কাস্টমারের সংখ্য মাত্র ২/১ জন।
এদিকে জেমকন গ্রুপের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, খাদ্য সামগ্রীর মান ঠিক রাখতে ‘পিওর ফুড অর্ডিনেন্স’ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর এমনিতেই চুপসে গেছে মীনাবাজার। ভ্রাম্যমান আদালতের ধারাবাহিক অভিযানে ‘মীনাবাজার’ এখন লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বারবার অনিয়ম করে জরিমানা গুনতে গুনতে প্রতিষ্ঠানটি যেমন নগদ টাকা গচ্চা দিচ্ছে, সেই সঙ্গে হারিয়েছে ক্রেতাদের আস্থা। ফলে, ক্রেতা বিমুখতায় একটি দীর্ঘমেয়াদি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে মীনাবাজার। এরই মধ্যে ঢাকা ও খুলনায় বন্ধ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি একাধিক আউটলেট।
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৬
আরএম/জেএম