বরিশাল: বরিশালের বাবুগঞ্জ, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলার কয়েকশ’ পানের বরজ জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ও সকালের জোয়ারের পানিতে পানের বরজ জলমগ্ন হয়ে পড়ায় পানের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পাশাপাশি বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান ও অন্যান্য সবজি ক্ষেতে জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, নদীবেষ্টিত বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় এবং স্লুইস গেট কার্যকরী ভূমিকা না রাখায় গ্রামের কৃষি জমি, পানের বরজ ও সবজি ক্ষেত জোয়ারের পানিতে ডুবে যাচ্ছে। ভাটায় সেই পানি নেমেও যাচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে পানের লতা ও পাতায় পচন ধরেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিকেল ও সকালে দু’বারের জোয়ারে নদীর তীরবর্তী পানের বরজগুলো ডুবে যায়। এসময় পানের লতার নিচের প্রায় দুই হাত পরিমাণ পানির নিচে থাকে।
উজিরপুরের শিকারপুর এলাকার পান চাষি হানিফ মোল্লা জানান, গত সপ্তাহের সোমবার (১ আগস্ট) থেকে অনবরত জোয়ারের সময় পানের বরজে পানি ঢুকছে। তাদের গ্রামে হাতে গোণা কয়েকটি বরজ উঁচু স্থানে হওয়ায় সেখানে পানি ঢোকেনি।
শুধু পানের বরজ নয়, ধান-সবজিসহ সব ধরনের ফসলের ক্ষেত জোয়ারের পানির নিচে চলে যায়, জানান তিনি।
নাছির সিকদার নামে অপর এক চাষি জানান, পান এতোই সবুজ ছিলো যে কাজলের মতো মনে হতো। এই কয়েকদিনের জোয়ারের পানিতে পানের লতায় পচন ধরেছে। পানের রংয়ে সাদাটে ভাব এসেছে। হলুদ হয়ে পচে যাচ্ছে অনেক এলাকার পান।
পানি নেমে গেলে বরজের আরো ক্ষতি হবে। বহু লতা তুলে ফেলে দিতে হবে। কোনো ওষুধে এ পচন রোধ করা যাবে না বলে জানান তিনি।
মানিক মোল্লা নামে এক চাষি জানান, তার ৫০ শতাংশ জমির ওপর করা বরজে পানি ঢুকে যায়। হাজারের ওপরে পানের লতা রয়েছে তার, এখন যে অবস্থা তাতে লাখ তিনেক টাকার ক্ষতি গুণতে হবে তাকে।
আগৈলঝাড়া উপজেলার রাসেল মোল্লা জানান, এখন পান চাষিদের বিপদ চলছে। এরপর পানি নেমে গেলে পচা লতা ফেলে দিয়ে নতুন লতা রোপণ করতে গিয়ে দেখা যাবে হাজার টাকার এক পণ (৮০ পিস) লতা দেড় হাজার টাকায় কিনতে হবে। সার-পানির সংকট দেখা দিবে। ছন, বাঁশের দামও বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।
তিনি আরো জানান, এসব সমস্যার কথা কৃষি কর্মকর্তাদের বললে তারা মুখে সমাধানের কথা বলেন। কিন্তু এখনো পানচাষিদের কোনো সমস্যা তারা সমাধান করতে পারেননি।
এদিকে, আঞ্চলিক কৃষি অফিস থেকে চাষিদের পান বরজের অবাঞ্ছিত পানি দ্রুত অপসারণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বলেন, বরিশাল জেলায় এ বছর দুই হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। বরিশালের পান চাষিদের বার বার বলা হয় যেন তারা জমি উঁচু করে পানের বরজ তৈরি করেন। কিন্তু তারা এতে ভ্রুক্ষেপ না করে অল্প কষ্টে বেশি লাভের চেষ্টা করে উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৬
এসআই