নাটোর: গতবারের তুলনায় এবার কম দামে চামড়া কিনেও বিপাকে পড়েছেন নাটোরের মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা।
একেতো লবণের দাম চড়া, তারপর আড়ত থেকে যে পরিমাণ চামড়া বিক্রি হয়েছে, তারও নগদ দাম না পাওয়ায় চরম হতাশা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে তাদের।
মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদুল আজহার দিনে গ্রামাঞ্চল থেকে চামড়া কিনে অনেক ব্যবসায়ী এখনও বিক্রি করতে পারেননি। চামড়া বিক্রি সেভাবে শুরু না হওয়ায় আড়তে এনে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে রেখেছেন। ঢাকার ব্যবসায়ীরা এলেই তা বিক্রি করবেন। তবে আড়তদার ও স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা কিছু কিছু চামড়া কিনলেও তাতে নগদ টাকা জোটেনি।
তারা বলেন, গতবারের অনেক বকেয়া পাওনা এখনও তারা পাননি। শুধু ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ধার কর্জ করে চামড়া কিনেছেন। পুঁজি সংকটের কারণে অনেকেই চাহিদা মাফিক চামড়া কিনতে পারেননি। যতটুক কিনেছেন তা বাজারজাতও হচ্ছে না।
তাদের অভিযোগ, আড়তদার ও স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দামে ধস নামিয়েছেন এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সর্বস্বান্ত করছেন। তারা চামড়া কিনলেও নগদ টাকা দিচ্ছেন না। ফলে লোকসানে পড়ছেন মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা।
তবে এসব আড়তদার ও স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা সরকার ও ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেওয়া দামেই চামড়া কিনছেন। সরকার বা ট্যানারি মালিকরা দাম কম নির্ধারণ করে থাকলে এ দায়-দায়িত্ব তাদের।
তাছাড়া গত বছরের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করেননি ট্যানারি মালিকরাও। শুধুমাত্র ২০ শতাংশ টাকা তারা ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পেয়েছেন। তাই নিজেরাও পুঁজি সংকটের কারণে বাকিতেই চামড়া কিনে মজুদ করছেন।
মৌসুমী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, এবার তারা গরু ১৫শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা, খাসি ৩০ টাকা থেকে ৮০ টাকা এবং ভেড়া বা বকরীর চামড়া ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকায় কিনেছেন। গতবারের তুলনায় এবার চামড়ার বাজার অনেক নিম্নমুখী হলেও ক্রেতার বড় অভাব।
রাজশাহীর বেলপুকুর থেকে আসা মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী হাসান আলী জানান, লবণের দাম বেশি হওয়ায় প্রতি পিস খাসির চামড়া ৭০/৮০ টাকায় কিনে প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ পড়ছে ১২০/১৫০ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় একই দামে।
পাবনার চাটমোহর এলাকার মৌসুমী ব্যবসায়ী জামাল হোসেন জানান, এক হাজার পিস খাসির চামড়া গড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বাকিতে বিক্রি করেছেন। কবে টাকা পাবেন এর কোন নিশ্চয়তা নেই।
একই অভিযোগ চুয়াডাঙ্গার সাহেব আলী, ঝিনাইদহের তৈয়বুর রহমান, দিনাজপুরের আব্দুল্লাহসহ আরো অনেকের। তারা জানান, গতবারের পাওনা টাকা নিতে ঈদের দুই দিন আগে এসে ধর্ণা দিয়েও কোন টাকা না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। কোনো পথ না পেয়ে এবারও ধার-দেনা করে চামড়া কিনেছেন। চামড়া বিক্রি করে টাকা না পেলে কিংবা চামড়া বিক্রি না হলে তাদের পথে বসতে হবে।
নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ বাংলানিউজকে জানান, তারা কোনও সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনছেন না। সরকার ও ট্যানারি মালিকদের বেধে দেওয়া দামেই চামড়া কিনছেন।
ট্যানারি মালিকরা এখনও চামড়া কেনা শুরু না করায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তারা চামড়া কেনা শুরু করলেই এসব সমস্যা দূর হবে। আশাকরি দু’একদিনের মধ্যেই ট্যানারি মালিকরা এসে যাবেন। তিনি বলেন, ভারতে চামড়া পাচারের কোনো সম্ভাবনা নেই।
নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া যেন পাচার না হয় সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬
আরএ