নাটোর: এবার ঈদুল আজহায় কোরবানি করা বিপুলসংখ্যক পশুর চামড়া আমদানি হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নাটোরের চামড়ার মোকামে।
তবে চামড়ার প্রাচুর্য থাকলেও ক্রেতার হদিস মিলছে না।
ফলে আড়তে জমা হওয়া কোরবানির পশুর চামড়া পচনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, সময়মতো কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পারলে অধিকাংশ চামড়াই পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার নষ্ট না হলেও চামড়ার মান অক্ষুন্ণ থাকবে না। এতে করে মোটা অংকের লোকসান গুণতে হবে তাদের।
তাই স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়ার পচন ঠেকাতে আড়তের ঘর ভাড়া নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার চেষ্টা করছেন। এতে তাদের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জামাল হোসেন নামে চামড়ার মৌসুমী এক ব্যবসায়ী জানান, গত বছর দাম বেশি হলেও ঈদের দুই তিন দিনের মধ্যেই চামড়া কেনা-বেচা শুরু হয়েছিল। এবার ঈদের পাঁচ দিন পার হলেও কোনো ক্রেতা নেই। তাই বাধ্য হয়ে বেশি টাকা খরচ করে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করে রাখতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ী সাঈদ কোরেশী জানান, আগে বস্তা প্রতি লবণের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১২৫০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত।
তিনি বলেন, লবণের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে ব্যবসা লোকসানের দিকে যাচ্ছে। সরকার এ সময়ে লবণের মূল্য কমিয়ে দিলে ব্যবসায়ীরা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারতেন।
পাবনার নগরবাড়ী থেকে আসা মৌসুমী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রবিন দাস জানান, ১৫০ পিস চামড়া এনে বিপাকে পড়েছেন তিনি। এ বছর গড়ে গরুর চামড়া কিনেছেন ১৪০০ টাকা দরে। নাটোর মোকামে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার বেশি দাম উঠছে না। বাধ্য হয়ে আড়তেই ভাড়া দিয়ে চামড়া মজুদ করেছেন। ট্যানারি মালিকরা আসলে বিক্রি করবেন। এখন ওই চামড়ার পচন ঠেকাতে লবণ দিতে হচ্ছে। লবণের দাম বৃদ্ধির কারণে খরচ ও শ্রমিক বেশি লাগছে। ফলে এবার পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
বরিশাল থেকে আসা আশরাফ জানান, পচে যাওয়ার আশঙ্কায় কম দামেই চামড়া বিক্রি করেছেন।
একই অবস্থা সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মৌসুমী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। এখন তাদের চিন্তা পুঁজির টাকা তুলে আনা।
এদিকে, লবণের দাম গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ হওয়ায় আড়তদাররা পড়েছেন বিপাকে। সরকার নির্ধারিত দরে বাধ্য হয়ে চামড়া কিনতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের কাছে থেকে বকেয়া না পাওয়ায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়ে এবার ঋণ করে চামড়া কিনছেন তারা।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি লুৎফর রহমান লাল্টু ও কার্যকরী সদস্য নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা পাওনা টাকা পায়নি। তাই অনেকেই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ধারকর্জ করে কোরবানির পশুর চামড়া কিনছেন।
তারা জানান, ট্যানারি মালিকরা এখনও চামড়া কেনা শুরু করেননি। তাই আড়তে চামড়ার স্তুপ জমেছে। বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত এসব চামড়ায় লবণ না দিতে পারলে পচন ধরতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬
এসআর