ঢাকা: কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী রামকৃষ্ণ দাশ। ১৫/২০ বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িত মুন্সীগঞ্জের এই ব্যবসায়ী।
গত কোরবানির ঈদের টাকা পরিশোধ করেননি রাজধানীর পোস্তার আড়তদারেরা। যে কারণে এলাকার বাকিও পরিশোধ করতে পারেননি রামকৃষ্ণ। ফলে এবারের ঈদের চামড়া কেনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। গত কোরবানির ঈদের টাকা পেতে এলাকা ছেড়ে পোস্তায় ধরনা দিচ্ছেন তিনি।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) পোস্তায় কথা হয় রামকৃষ্ণের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এবার চামড়া কিনতে পারিনি। গতবারের ১৪/১৫ লাখ টাকার মধ্যে পোস্তার আড়তদাররা দিয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ। এ টাকা দিয়ে কিভাবে চামড়া কিনবো? এলাকায় পা দিতে পারি না। গ্রামে গেলে টাকার জন্য অনেকে ঘিরে ধরেন’।
শুধু রামকৃষ্ণ দাশই নন, অনেক কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীই পাওনা টাকা পাচ্ছেন না। আর পোস্তার আড়তদারদের বক্তব্য, ট্যানারি মালিকেরা টাকা না দেওয়ায় তারাও ব্যবসায়ীদের দিতে পারছেন না। তাদের কাছ থেকে বাকিতে চামড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, অথচ বছরের পর বছর টাকা পরিশোধ করছেন না ট্যানারি মালিকেরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোস্তার আড়তদাররাও বাকিতে চামড়ার ব্যবসা করেন। আর ভুক্তভোগী হন সাধারণ ব্যবসায়ী ও যেসব মানুষ কোরবানি দিয়ে চামড়া বিক্রি করেন তারা।
ট্যানারির মালিকদের কাছ থেকে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পোস্তার আড়তদারদের বিরুদ্ধে। যেমন, পোস্তার একজন আড়তদার যদি এক লাখ চামড়া লবণ দিয়ে সংগ্রহ করে দেন, তবে ৫০ লাখ টাকা কমিশন পান ট্যানারির কাছ থেকে। কারণ, প্রতিটি কাঁচা চামড়ায় ৫০ টাকা কমিশন পান আড়তদাররা।
ট্যানারি মালিকদের কমিশন খেয়ে চুপ থাকেন পোস্তার আড়তদাররা। আর তাদের কাছ থেকে টাকা না পেয়ে গ্রাম পর্যায়ে বাকিতে চামড়া সংগ্রহ করে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
পোস্তার আড়তদার সুজা উদ্দিন তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ট্যানারি মালিকদের কাছে দুই থেকে তিন বছরের আগের টাকা পাবো। তারা এই কোরবানিতে দেবো, ওই কোরবানিতে দেবো বলে ঘোরাচ্ছেন। আমাদের পাওনা টাকার ২৫ শতাংশের বেশি দিচ্ছেন না। গত বছরের একটি টাকাও দেননি। আমরা কিভাবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করবো?’
আবার আন্তর্জাতিক বাজার দর কমে যাওয়া ও সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের কারণে পোস্তার আড়তদারদের টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না বলে দাবি বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ)।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আড়তদারদের এবারের ঈদের টাকা ভালো মতো পেমেন্ট করতে পারিনি। আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। গত বছরের প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া অবিক্রিত রয়ে গেছে। এছাড়া সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তরের কারণেও ঝামেলায় আছি। সাভারেও আমরা বিনিয়োগ করেছি’।
এদিকে চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের ৬১০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় চার বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক ২৫০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ১৬০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ১৩০ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংক ৭০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করবে।
এ ঋণ নিয়ে কি করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা যে টাকার চামড়া কিনি থাকি, তার তুলনায় ব্যাংক ঋণ অনেক কম। প্রত্যেক ট্যানারির মালিকের ভাগে এক কোটি টাকাও পড়ে না’।
এবার এক কোটি পশু কোরবানি হওয়ায় সে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট ট্যানারিগুলোর। এর মধ্যে ৫০ লাখ গরু এবং ছাগল, মহিষ ও ভেড়া মিলে ৫০ লাখ। ১০ লাখ পিস চামড়া নিজস্ব লোক দিয়ে কিনতে পেরেছেন ট্যানারি মালিকরা। বাকি চামড়া তারা সংগ্রহ করছেন আড়তদারদের কাছ থেকে।
ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছেন ঢাকায় ৫০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৪০ টাকা। খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ১৫ টাকা।
তবে পোস্তার আড়তদারেরা প্রায় ৭৫ টাকা বর্গফুট দরে গরুর চামড়া কিনছেন।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. টিপু সুলতান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার চামড়ার মান অনেক ভালো, তাই ৭৫ টাকা পর্যন্ত বর্গফুট কেনা হচ্ছে। দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে ঢাকার চামড়া সংগ্রহ শেষ হবে। পরের সপ্তাহ থেকে ঢাকার বাইরের চামড়া কেনা শুরু করবো। ঢাকার বাইরের চামড়ার বড় আড়ত নাটোর, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি ও ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ। প্রায় তিন মাস ধরে চলবে চামড়া সংগ্রহের কাজ’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর