ঢাকা: তৈরি পোশাক খাতের দেখানো পথ ধরে জেগে উঠছে চামড়া শিল্প। সরকারি-বেসরকারি নানা কার্যকর পদক্ষেপে দেশের দ্বিতীয় রফতানি খাত হিসেবে সম্ভাবনার পাখা মেলতে শুরু করেছে এ শিল্প।
সাভারের চামড়া শিল্পপার্কে ট্যানারি কারখানা স্থানান্তর সম্পন্ন হলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে রফতানি আয় ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চামড়া শিল্প এখন দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প খাত। ক্রমবর্ধমান এ খাতের উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এখন দরকার শুধু সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা।
তিনি বলেন, রফতানিতে ভবিষ্যতে গার্মেন্টস শিল্প খাতের আয়কেও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে চামড়া খাতের। কারণ, গার্মেন্টস শিল্পের রফতানি আয়ের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ টাকাই বিদেশে চলে যায় তুলা, সুতা, রং, বোতাম, চেইন, কাপড় আমদানি খাতে। কিন্তু চামড়া খাতের শতভাগ টাকাই দেশে থেকে যায়। কারণ, এর প্রায় সবই দেশে উৎপাদিত হয়।
বানিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মেয়াদে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ৮৫ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। জুন মাসে এসে এ আয় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ১১৩ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে জুলাই-মার্চ মেয়াদে এ খাতে আয় হয়েছিল ৮২ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২১ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে প্রথম ৯ মাসে এ খাতে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৮ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মেয়াদে কাঁচা চামড়া রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৯ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার। তবে এ সময়ের মধ্যে আয় হয়েছে ২১ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের একই সময়ে চামড়া রফতানিতে আয় হয়েছিল ৩০ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ১৭ কোটি ২ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতের পণ্য রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। আয় হয়েছে ২৮ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৯ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। একইসঙ্গে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে চামড়াজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে ৬৮ দশমিক ১১ শতাংশ।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মেয়াদে কেবল চামড়ার জুতা রফতানিতে আয় হয়েছে ৩৫ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে এ খাতের পণ্য রফতানিতে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মেয়াদে চামড়ার জুতা রফতানিতে আয় হয়েছিল ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা রফতানি আয় এরই মধ্যে ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছি। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে আগামী ৫ বছরে এ খাতের আয় ৫শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে’।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আগের সকল পরিসংখ্যানই পেছনে ফেলছে চামড়া শিল্প। ঘোষিত রফতানি নীতি ২০১৫-১৮ তে চামড়াজাত পণ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাতে অর্ন্তভুক্ত করেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত হিসেবে এ খাতের উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। একই সঙ্গে সরকার কাঁচা চামড়া রফতানিকে নিরুৎসাহিত করে ফিনিশড ও ক্রাস্ট লেদার রফতানিকে উৎসাহিত করছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, কেবল চামড়াজাত পণ্য রফতানি করেই ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৭শ’ ৩২ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮শ’ ৮৩ দশমিক শূন্য ৫ মিলিয়ন ডলার। সরকার চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে ব্যবসায়ীদের ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ১২৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ৮৬ কোটি ১২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এই শিল্প নগরীর প্রতিষ্ঠানগুলোকে রফতানি খাতে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬
আরএম/এএসআর