ঢাকা: পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাঁশ চাষ প্রক্রিয়ার উন্নয়ন, বাঁশ চাষের আওতা বৃদ্ধি এবং বাঁশভিত্তিক কুটির শিল্প ও রফতানি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাঁচামাল সরবরাহ বৃদ্ধি করা হবে। ফলে পাহাড়ি অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে বলে জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড।
বাংলাদেশের মোট জমির ১০ শতাংশ পাহাড়ি এলাকা, যার অধিকাংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে নন টিম্বার ফরেস্ট প্রোডাক্ট (এনটিএফপি) যেমন বাঁশ ও বেত ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
সরকারি উদ্যোগে বাঁশ-বেতের সম্প্রসারণে নতুন স্বপ্ন দেখছেন পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠী।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত জাতের বাঁশ-বেত উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে পাহাড়ি অঞ্চলে বাঁশ রক্ষা ও চাষ সম্প্রসারণে ২৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলার ২৬টি উপজেলায় বাঁশ ও বেতের উৎপাদন বাড়ানো হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন অধিশাখা) সুদত্ত চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ‘পার্বত্য এলাকার মাটির ধরন ও আবহাওয়া বাঁশ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। অথচ পাহাড়ি অঞ্চলে দিন দিন বাঁশের চাষ কমে যাচ্ছে। বাঁশের বংশ বিস্তার এবং উন্নয়নে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। পাহাড়ি অঞ্চলে বাঁশ চাষ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হবে’।
‘বাঁশ চাষের বড় গুণ, এটি পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিক্ষয় রোধ করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রচুর বাঁশ জন্মে। বাঁশ ও বেতের বিশেষ সুবিধার দিক হলো, এতে তেমন পরিচর্যা করার দরকার হয় না। বাঁশ ও বেত উৎপাদনে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ খ্যাতি ছিল। কিন্তু বাঁশ ও বেত ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। বাঁশের উৎপাদন বাড়াতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে’।
তিনি আরও বলেন, বাঁশ চাষের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হবে। বাঁশ দিয়ে তৈরি ফার্নিচার, ঐতিহ্যগত জিনিসপত্র থুরুং, তলই, মাদুর ও মোড়া উৎপাদন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। বাঁশজাত পণ্য ও হস্তশিল্পে দক্ষতা অর্জন করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে’।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পার্বত্য এলাকায় প্রায় এক লাখ হেক্টর বনভূমিতে বাঁশ রয়েছে। তবে জমি দখল, অধিক পরিমাণে বনজ সম্পদ আহরণ, জমি চাষের ধরন পরিবর্তন, অবৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা, জুম চাষ, ফলদ বাগান সৃজন ইত্যাদি কারণে বাঁশ উৎপাদনকারী জমি বছরে ২ দশমিক ৬ শতাংশ হারে কমছে।
প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৩ হাজার নতুন বাঁশ বাগানের পাশাপাশি উপকারভোগীদের মাঝে ২৮ লাখ ৬০ হাজারটি বাঁশের চারা বিতরণ করা হবে। বরাক, বারি, মিতিঙ্গা, মুলি, ডলু, ওরা জাতের বাঁশ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হবে। ২৬০টি বাঁশভিত্তিক ক্ষুদ্র কুটির শিল্প স্থাপনে সহায়তা করা এবং ১৩ হাজার ২৬০ জন কৃষককে বাঁশ উৎপাদনে দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
বাঁশের পাশাপাশি বেতের চারাও সরবরাহ করে চাষিদের নার্সারির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যেন জুমের বিকল্প হিসেবে বাঁশ ও বেত চাষে উৎসাহ পান তারা। উৎপাদিত পণ্য বিপণন ও বাজারজাতেরও ব্যবস্থা করা হবে। এর পাশাপাশি বাঁশ ও বেত বিষয়ক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠার চিন্তা করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর