ঢাকা: প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। কিন্তু তার সঙ্গে বাড়ছে না শ্রমিকদের মজুরি।
আর এ সময়টাতেই খোদ শ্রমিক নেতাদের কারণেই মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে ধীরগতি আসছে বলে অভিযোগ পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের।
শ্রমিক নেতাদের আত্মকেন্দ্রিকতার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্যাশন জোনের এক শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে শ্রমিক নেতারাই বলেছিলেন যে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে মজুরি বৃদ্ধির তিন বছর হবে। তখন নতুন মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে শ্রমিকরা আন্দোলন না করলে দাবি আদায় করতে পারবেন না। কিন্তু এখন আমাদের নেতারাই এগোচ্ছেন না’।
‘শ্রমিকরা যখন আন্দোলনের জন্য তৈরি, তখন নেতারা বিদেশ ঘুরছেন। কেউবা আবার বিদেশিদের সেমিনার নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের কথা বলার সময় তাদের নেই’।
চলতি বছরের শুরু থেকেই ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে মাঠে নামার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিলো। আলোচনার এক পর্যায়ে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে সরকার ও বিজিএমইএকে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে শ্রমিক সংগঠন সূত্রে।
শ্রমিক নেতাদের কারণে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে ধীরগতি আসার বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ শ্রমিক নেতারাই। তবে এর পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে নেতাদের কারণে ধীরগতি আসার অভিযোগটি সত্য। মূলত এটি একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা আমাদের শ্রমিক নেতাদের নানা অর্থের টোপ দিচ্ছে। শুধু অর্থের টোপই নয়, সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বিদেশ ভ্রমণেরও। ফলে নেতারা ব্যস্ত থাকছেন এসব বিদেশ ভ্রমণ ও সভা-সেমিনারে। কারণ, এসব সভা-সেমিনারে গেলে মোটা অংকের টাকা পাওয়া যায়। যার কারণে নেতারা মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে নজর দিতে পারছেন না’।
দেশের বর্তমান অভ্যন্তরীণ অবস্থার কারণেও মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে কিছুটা ধীরগতি এসেছে বলে জানিয়েছেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ও ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে যে গতি থাকা উচিত ছিলো তা নেই, এটি সত্যি। এতে নেতাদের কিছুটা দায় আছে। কিন্তু সম্প্রতি দেশে নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমরা কিছুটা ধীরগতি অবলম্বন করছি। যেন আমাদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের প্রশ্ন না ওঠে’।
২০১৩ সালের শুরুতে শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। গঠিত হয় মজুরি বোর্ড। মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে মজুরি বোর্ডের ১০ম সভায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা ঘোষণা করা হয়।
বিজিএমইএ’র তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ হাজার গার্মেন্টস রয়েছে, যেগুলোতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮,২০১৬
ইউএম/এএসআর