ঢাকা: বস্ত্রের রানি রেশম। রেশম শিল্প বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক কৃষিভিত্তিক কুটির শিল্প হিসেবে সুদূর অতীতকাল থেকে বিবেচিত হয়ে আসছে।
এছাড়া বিশ্বের সর্ব বৃহৎ রেশম উৎপাদনকারী দেশ চীন সম্প্রতি রেশম সূতা রফতানি ব্যাপক হারে কমিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে না পারলে চাহিদা মাফিক রেশম সূতার অভাবে রেশম শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় পাহাড়ে ব্যাপকহারে রেশম উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ সমস্যা নিরসন করে রেশম চাষের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে দেশে রেশমের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এই চাষ সম্প্রসারণ করা হবে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার ১৭টি উপজেলায় রেশম চাষ করা হবে। ফলে পাহাড়ের জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবে। রাঙামাটির জেলার সদর, কাউখালি, লংগদু, কাপ্তাই, নানিয়ারচর ও রাজস্থলী উপজেলায় রেশম চাষ করা হবে। খাগড়াছড়ি জেলার সদর, পানছড়ি, মহালছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙা, গুইমারা ও দীঘিনালা উপজেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বান্দরবান জেলার সদর, লামা, আলিকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বৃদ্ধির চাপে আবাদী জমিতে খাদ্য শষ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সমতল এলাকাতে রেশম চাষ বাড়াতে হবে। পাহাড়ি জমির জলবায়ু ও মাটি রেশম চাষের জন্য উপযোগী। এখানে ব্যাপক পরিমাণে অনাবাদী জমির প্রাপ্যতা রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় অনেক ছড়া ও ছড়ি রয়েছে যার পাশে তুঁতচাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকায় বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। তিন পাহাড়ি জেলার মোট অায়তন ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে পতিত জমি রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৪০ কিলোমিটার।
যেখানে রেশম চাষ করে পাহাড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, আয়বৃদ্ধি এবং মহিলাদের ক্ষমতায়নে অনন্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে। তুঁতচাষ, রোগমুক্ত রেশম ডিম উৎপাদন, পশুপালন, রিলিং, উইভিং পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত কাজগুলো রেশম শিল্পের ধারাবাহিক কার্যক্রম। রেশম কার্যক্রমের এসব স্তরে বর্তমানে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার লাখ লোক জড়িত। এদের ৯০ শতাংশ মানুষই সমাজের দরিদ্র শ্রেণীভূক্ত, যার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে এই শিল্পের সঙ্গে ধারাবাহিক সম্পৃক্ত রেখে রেশম চাষে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়াও পাহাড়ি এলাকায় রেশম চাষের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে। সেই লক্ষ্যে ১৭টি উপজেলায় ১৫ কোটি ৭ লাখ টাকা খরচ হবে।
এর মধ্যেই রাঙামাটির চন্দ্রঘোনায় আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় রেশম চাষ সম্প্রসারণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা হবে। পাহাড়ি এলাকায় উপযোগী তুঁত ও রেশমকীট জাতসমূহ উদ্ভাবন ও নির্বাচন করা হবে। তুঁতচাষের নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে হস্তান্তর করে পাহাড়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড।
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক আনিস-উল-হক ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, তিন পাহাড়ি জেলার ১৭টি উপজেলা ব্যাপকহারে রেশম চাষ করবো। এর ধারাবাহিকতায় পাহাড়ি এলাকায় ৬ লাখ তুঁতচারা, উৎপাদন, তিন লাখ ডিম উৎপাদন ও বিতরণ, ১ লাখ ২০ হাজার কেজি রেশম গুটি উৎপাদন, ২ লাখ চাকী পলু উৎপাদন ও বিতরণ করবো। পাহাড়ে ২ হাজার ৬৫০ জন রেশম চাষি সৃষ্টিসহ ১ হাজার ৪৫০ জন রেশম চাষিকে রেশমের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। যাতে করে পাহাড়ি এলাকায় ১০ হাজার দরিদ্র বেকার জনগোষ্ঠী খুঁজে পায় কর্মসংস্থান। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
এমআইএস/আরএ