ঢাকা: গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা, বিমা দাবি পূরণে গড়িমসি এবং ব্যবস্থাপনার নামে বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অবৈধ কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
বুধবার (অক্টোবর ২৬) কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ (একচ্যুয়ারি) এই নির্দেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর ‘গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা বায়রা লাইফ!’, ২৫ অক্টোবর ‘বিমা দাবি পূরণে বায়রা লাইফের গড়িমসি’ শিরোনামে বাংলানিউজে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের প্রেক্ষিতে বুধবার দুপুরে কর্তৃপক্ষের প্রধান সদস্য আব্দুল কুদ্দসকে দায়িত্ব দিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান।
এর আগেও গত ১৬ অক্টোবর ‘বায়রা লাইফের অনিয়ম তদন্তে অডিটর নিয়োগ’ এবং ১৮ অক্টোবর ‘চৌদ্দ বছর পরও পুঁজিবাজারে আসছে না বায়রা লাইফ, গুণছে জরিমানা’ শিরোনামে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
অবিলম্বে এসব বিষয়ে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে কমিটিকে নির্দেশনা দেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান।
‘গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা বায়রা লাইফ!’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে একক ও ক্ষুদ্র বিমার নামে প্রায় দেড় হাজার মানুষের টাকা নিয়ে লাপাত্তা বায়রা লাইফ এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
এসব গ্রাহকদের বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র। ওই এলাকার কোম্পানির এজেন্ট এবং যাদের মাধ্যমে গ্রাহকরা বিমা করেছেন তাদের ওপরে নেমে এসেছে বিপদ, চলছে নির্যাতন। পলিসিহোল্ডারদের ভয়ে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার-পরিজন ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও। সমস্ত টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে প্রধান কার্যালয়ে জমা দিয়েছিলেন তারা।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ২০০৪ সালে চালু হওয়া বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জে ৪টি শাখার মধ্যে বনগ্রামের ৪২৫টি, বৌলপুরের ৬১০টি, নারিকেলবাড়িয়ার ৫৪টি, বর্শিবাওয়ার ১৫৭টি, শৌলখালীর ৯০টি, কচুবুনিয়ার ৫৩টি এবং পিরোজপুরের বলেশ্বর শাখার ৭০টি পলিসির টাকা নিয়ে লাপাত্তা বায়রা লাইফের অফিস। যাতে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পলিসি ছিলো।
‘বিমা দাবি পূরণে গড়িমসি করছে বায়রা লাইফ’ প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে সব কাগজপত্র থাকার পরও সাড়ে ৪শ’ গ্রাহকের বিমা দাবি পূরণে গড়িমসি করছে বায়রা লাইফ। এ কারণে বাগেরহাট জেলার ৩৬৫ এবং লালমনিরহাটের ৭৬জন এবং কুড়িগ্রাম জেলায় গ্রাহক মিলে ৪৫৫ জন দরিদ্র পলিসিহোল্ডার গত ২ থেকে ৪ বছর তাদের বিমা দাবি পেতে কোম্পানির লোকদের কাছে ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বিমা দাবি এবং এজেন্টদেরও খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
গ্রাহকরা আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগও করেও বিমা দাবি পাচ্ছেন না।
এছাড়াও গত ৭ বছরে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের তুলনায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নামে নির্ধারিত টাকার চেয়ে ৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা বেশি দেখিয়ে পলিসিহোল্ডারদের টাকা লোপাট করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যা বিমা বিধিমালার (১৯৫৮) ৩৯ বিধির লঙ্ঘন। বাংলানিউজের প্রতিবেদনে এসব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
এমএফআই/এমজেএফ