ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গোল্ডেন লাইফে ১৯ কোটি টাকার অবৈধ বিনিয়োগ

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৬
গোল্ডেন লাইফে ১৯ কোটি টাকার অবৈধ বিনিয়োগ

ঢাকা: সরকারি সিকিউরিটিজের ১৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা অবৈধভাবে অন্য খাতে বিনিয়োগ করেছে পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।  

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

সূত্র জানায়, নিয়ম অনুসারে বিনিয়োগ করতে তিনবার ডেকে এনে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে আইডিআরএ। তাদের চাহিদা অনুসারে তিন দফা সময়ও বাড়িয়েছে।  

কিন্তু তারপরও বিমা আইন অনুসারে জীবন বিমা পলিসি হোল্ডারদের মেয়াদ পূর্তিজনিত দায়ের ৩০ শতাংশ সরকারি বন্ড ও অনান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশনা মানছে না কোম্পানিটি। বরং আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে।

কোম্পানিটির অনিয়ম দূর করতে গত ২৬ অক্টোবর আইডিআরএতে কোম্পানির সিএফও এবং ইনভেস্টমেন্ট কমিটির প্রধানের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান, চার সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শুনানি শেষে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানটিকে আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারি বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হলে বিমা আইন-২০১০ এর ধারা ১০ এর (ঘ) ও (ছ) উপধারাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটি সরকারি বন্ড ও অনান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশনা মানছে না। তাই কোম্পানিকে সতর্ক করা হয়েছে। শেষবারের মতো আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ পরিপূর্ণ করতে না পারলে নিয়ম অনুসারে শাস্তি পেতে হবে।

সূত্র জানায়, বিমা আইন-১৯৩৮ অনুসারে কোম্পানিকে তাদের সংগৃহীত প্রিমিয়ামের ৩০ শতাংশ সরকারি বন্ড ও সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে। বাকি ৭০ শতাংশ ব্যাংক, পুঁজিবাজারসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে। এ আইন পালনের জন্য গোল্ডেন লাইফকে গত ১৯ এপ্রিল, ০৫ জুন ও ০৬ সেপ্টেম্বর তিন দফা বৈঠকের পর সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু কোম্পানিটি তা পালন করেনি।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে মোবাইল ফোনে প্রতিষ্ঠানের এমডি নূর মোহাম্মদ ভূঁইয়ার সঙ্গে শনিবার (০৫ নভেম্বর) দুপুরে (১২টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত) একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করনেনি।  

বিনিয়োগের নির্দেশনা অমান্য ছাড়াও ব্যবস্থাপনার নামে ১৬৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা অবৈধ ব্যয়ের পাশাপাশি কোম্পানির অন্যান্য অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান (অডিট ফার্ম) নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ।  

আইডিআরএ নির্ধারিত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান একনাবিন অডিট ফার্ম কোম্পানির ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের ব্যবসায়িক চিত্র নিরীক্ষা করবে। এতে কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, বিনিয়োগ, প্রিমিয়াম আয়, তামাদি পলিসি, লাইফ ফান্ড ও সম্পদের প্রকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।

এদিকে আইডিআরএ’র পাশাপাশি কোম্পানির ১৬৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা অবৈধ ব্যয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুদকের গঠন করা কমিটি তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯-২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৭ বছরে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের তুলনায় নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের চেয়ে ১৬৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা বেশি দেখিয়েছে কোম্পানিটি। বিমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর ৩৯ বিধি অনুযায়ী, প্রথম বর্ষ ব্যবসার জন্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ৯০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

কিন্তু কোম্পানিটি নির্ধারিত সীমার চেয়ে ২০১১ সালে ২৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ১৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং ২০১৫ সালে ১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা বেশি ব্যয় দেখিয়েছে। যা বিমা বিধিমালা-১৯৫৮ এর বিধি ৩৯ এর লঙ্ঘন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৬
এমএফআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।