ঢাকা: কার্যক্রম চলছে দেশে, কিন্তু বিমা পলিসি গ্রহণ করতে চায় বিদেশ থেকে। সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের এমন আবেদন নাকচ করে দিয়েছে সাধারণ বিমা করপোরেশন।
চুক্তিপত্রে বিমা সংক্রান্ত প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে বাংলাদেশের বাইরে যেকোনো বিমা কোম্পানির কাছ থেকে পলিসি গ্রহণ করলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ওই আবেদন নাকচ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে বিমা শিল্পে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিমা আইন অনুসারে সরকারের সব ধরনের প্রকল্পের চুক্তিতে সরকারি সম্পদের অনুকূলে সব ধরনের বিমা তাদের সঙ্গেই সম্পাদনের বিষয়টি উল্লেখ করার আবেদন জানিয়েছে সাধারণ বিমা করপোরেশন।
জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাংলাদেশের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড এবং সিঙ্গাপুরের সেম্বকর্প যৌথভাবে ‘কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট সিরাজগঞ্জ ইউনিট-৪’ স্থাপন করছে।
সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে ব্যয় হবে ৪শ' ১২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিক হিসাবে খরচ পড়বে গ্যাসে ৩ টাকা ১৯ পয়সা এবং তেলে ১৩ টাকা ৫৭ পয়সা। চুক্তি অনুসারে ২০১৮ সালের আগস্ট মাস থেকে বাণিজ্যিকভাবে এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
এ ধরনের কোম্পানি দেশের বাইরে থেকে বিমা সুবিধা গ্রহণ করলে বছরে প্রায় দশ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হবে সাধারণ বিমা করপোরেশন।
ঝুঁকি আবরণের জন্য বিদেশ থেকে বিমা সুবিধা গ্রহণ করতে সাধারণ বিমা করপোরেশনের দায় গ্রহণ বিভাগে সম্প্রতি অনাপত্তিপত্র চেয়ে আবেদন করে ‘কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট সিরাজগঞ্জ ইউনিট-৪’ নির্মাতা কোম্পানি।
বিমা আইন-২০১০ এর ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশস্থ সম্পত্তি বা স্বার্থের ঝুঁকির বিমা, বাংলাদেশে ঝুঁকি আবরিত করা যায় না মর্মে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সনদপত্র গ্রহণ করা ছাড়া বিদেশে বিমা করতে পারবে না’।
বিষয়টি জানিয়ে সেম্বকর্প-নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কমার্শিয়াল প্রধান এবং কোম্পানি সচিব কেএইচ নাজুমল আহসানকে চিঠি পাঠিয়েছেন সাধারণ বিমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান।
এতে বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান আইন অনুসারে বাংলাদেশের কোনো সম্পদের বিদেশে বিমা করার কোনো বিধান না থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বিমা-পুন:বিমা করার বাধ্যবাধকতা থেকে অনাপত্তি প্রদানের কোনো সুযোগ নেই’।
‘বাংলাদেশের বাইরে যেকোনো কোম্পানিকে বিমা পলিসি করার অনুমতি প্রদান করা হলে দেশের বিপুল পরিমাণ বিমা প্রিমিয়াম বিদেশে চলে গেলে দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে বিমা করার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যহতির আবেদন করবে’।
‘ফলে সাধারণ বিমা করপোরেশনসহ অন্যান্য বিমা কোম্পানিগুলোও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ শিল্প চরম হুমকির সম্মুখীন হবে। দেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ থেকেও বঞ্চিত হবে’।
এদিকে ব্যবসায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ বিমাসহ দেশের ৪৫টি নন লাইফ বিমা কোম্পানি সরকারি সম্পদের অনুকূলে শতভাগ বিমাঝুঁকি গ্রহণ এবং সঠিক সময়ে দাবি পরিশোধ করছে।
সাধারণ বিমা করপোরেশনের এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বলেন, ‘বিমা ব্যবসা দেশের বাইরে করার বিষয়টি বিমা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দেশে বিমা প্রিমিয়াম কমে যাওয়া ও বিমা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা উচিত। কারণ, অনেক বড় বড় কোম্পানির বিমা করার সক্ষমতা আমাদের আছে’।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬
এসই/এএসআর