ঢাকা: মায়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা চায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে দু’দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন ও জাহাজ চলাচলের ব্যয় কমিয়ে আনতে দ্রুত উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি সই করার দাবিও জানান তারা।
সোমবার (নভেম্বর ০৭) রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এসব প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন বিএমসিসিআই নেতারা।
চীনসহ দূর-দূরান্তের দেশগুলো প্রতিবছর মায়ানমারের সঙ্গে বিপুল অঙ্কের বাণিজ্য করছে। অথচ প্রতিবেশী হয়েও সে সুবিধা নিতে পারছে না বাংলাদেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মায়ানমারে সদ্য গণতন্ত্রে প্রবেশ করেছে। আর স্বাভাবিকভাবেই দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে এটাই মোক্ষম সময় বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। আর সেজন্যই দেশটির সঙ্গে নানামুখী যোগাযোগ বাড়াতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, মায়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭৬.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে দু’দেশের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্যের পরিমাণ এর কয়েকগুণ।
বিএমসিসিআই নেতারা জানান, মায়ানমারে বাংলাদেশের কোন ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক লেনদেন না থাকায় পণ্য আমদানি বা রপ্তানির জন্য ব্যবসায়ীদের এলসি খুলতে হয় সিঙ্গাপুরে। এর ফলে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের পণ্যের মূল্য দ্বিগুণ হয়।
এ বিষয়ে বিএমসিসিআই প্রেসিডেন্ট নুরুল হক বলেন, ‘মায়ানমার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসিইউ’র বর্তমান চেয়ারম্যান। তাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের পেমেন্ট চ্যানেল খোলার এখনই সুযোগ। ইতিমধ্যে ১৪টি বিদেশি ব্যাংক মায়ানমারে শাখা স্থাপন করেছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশকেও এখনই এ সুযোগ গ্রহণ করতে হবে। ” বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ বিষয়ে সম্মত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্য বাড়াতে ক্রয়সীমা ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ মার্কিন ডলার করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
দীর্ঘদিন পরে হলেও মায়ানমারের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে উভয় দেশ সম্মত থাকা সত্ত্বেও উপকূলীয় জাহাজ চলাচল (এসওপিসহ) চুক্তি সইয়ের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষমাণ রয়েছে।
দু’দেশের মধ্যে জাহাজ চলাচল শুরু হলে ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাণিজ্য সুবিধা বাড়বে জানিয়ে বিএমসিসিআই’র নির্বাহী পরিচালক এম মুসলেহ উজ জামান বলেন, “মাত্র সাত ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মায়ামারের সিতউ পর্যন্ত একটি জাহাজ পৌঁছাতে পারে। অথচ দেশটির ইয়াঙ্গুন বন্দর থেকে সিতউ পর্যন্ত একটি জাহাজ যেতে সাতদিন সময় লেগে যায়। সড়ক পথে লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। ফলে জাহাজ চলাচল শুরু হলে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য দেশটির পূর্বাঞ্চলের বাজারে পাঠানো সহজ হবে। ”
এ বিষয়ে নুরুল হক বলেন “দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি। ”.
এছাড়া মায়ামারের সঙ্গে বাণিজ্যিক স্থবিরতা কাটাতে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আহবান জানান বিএমসিসিআই সভাপতি।
তার মতে, ধর্মীয় বাধা ও দু’দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত বিভিন্ন সমস্যা থাকা স্বত্ত্বেও পূর্বমূখী বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করে পূর্ব এশিয়ার বিরাট বাজারে প্রবেশ করা সম্ভব হবে।
বিএমসিসিআই নেতারা জানান, মায়ামারের সঙ্গে প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্টের (পিটিএ) মাধ্যমে নির্মাণ সামগ্রী, বৈদ্যুতিক ও ইলেক্ট্রনিক দ্রব্যাদি, ওষুধ, সিরামিক ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি করা যাবে। সেবা খাত, কনসালটেন্সি, অবকাঠামো নির্মাণেও মায়ানমারে সুবিধা করতে পারবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজের জন্য মায়ানমার থেকে পাথর আনা যেতে পারে। স্বল্পমূল্যে আসবাবপত্র নির্মাণে মায়ানমারের বাজার সুবিধা নেওয়া যেতে পারে। মায়ানমারে কৃষি পণ্য ও মৎস্য উৎপাদন করে বাংলাদেশে আমদানি করা সুবিধাজনক হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৯-১০ নভেম্বর ঢাকায় মায়ানমারের সঙ্গে অষ্টম যৌথ বাণিজ্য কমিশনের (জেটিসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উভয় দেশের বাণিজ্য সচিব এ বৈঠকের নেতৃত্ব দেবেন। জেটিসির এ বৈঠকে এ সব বিষয় গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করার পক্ষে মত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬
জেপি/আরআই