ঢাকা: আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘মূল্য সংযোজন ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’। বাতিল হয়ে যাবে বর্তমান ‘মূল্য সংযোজন ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ১৯৯১’।
নতুন আইন বাস্তবায়নে ভ্যাট সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল থেকে অনলাইন ভিত্তিক হয়ে যাবে। এজন্য ছোট-বড় সব কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বরে (বিন) রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করতে হবে।
ভ্যাট অনলাইন সূত্র জানায়, গত ২৪ নভেম্বর পাইলিং হিসেবে বড় কোম্পানিগুলোর নিবন্ধন শুরু হয়। বৃহৎ করদাতা ইউনিটের আওতাধীন ২৩৪টি কোম্পানির মধ্যে ইতোমধ্যে ১০৯টির নিবন্ধন শেষ হয়েছে। বাকিগুলোরও সহসাই শেষ হবে। নিবন্ধনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে এসব কোম্পানিকে অবহিত করতে এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের ল্যাবে করে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৃহৎ করদাতা ইউনিটের আওতাধীন ২৩৪টি কোম্পানির মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানির একাধিক নিবন্ধন রয়েছে। অনলাইন নিবন্ধনে প্রতিটি কোম্পানির একটি নিবন্ধন থাকবে। সেজন্য কোম্পানির নিবন্ধন সংখ্যা কমে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সাতটি, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চারটি, বাটা সু কোম্পানির দু’টি, নাজির আহমেদের চারটি, বার্জার পেইন্টসের ২০টি, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৫টি, রেনেটা লিমিটেডের ছয়টি, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের নয়টি, বাংলাদেশ শেল ওয়েলের ছয়টি, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের চারটি, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চারটি, লিন্ডি বাংলাদেশ লিমিটেডের ২১টি ও বাংলাদেশ এডিবয়েল ওয়েল চারটি। এছাড়া বেশ কিছু কোম্পানির ২ থেকে ৩টি করে ভ্যাট নিবন্ধন রয়েছে।
গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীণ জাতীয় রাজস্ব ভবনে ট্যাক্স কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে ভ্যাট অনলাইন নিবন্ধনের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী অনলাইনে প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যানের হাতে এ নিবন্ধন সনদপত্র তুলে দেন। পরে ২৭ ও ২৯ নভেম্বর বাকি কোম্পানিগুলোকে সনদ প্রদান করা হয়।
সূত্র জানায়, চলতি ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় পাইলটিং হিসেবে ঢাকার চারটি ভ্যাট কমিশনারেটের (ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট) ৬০টি করে ২৪০টি বড় মূসকদাতা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন সনদপত্র দেওয়া হবে। এ ৬০টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কার্যালয়ে প্রকল্পের লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে নিজেরাই এ নিবন্ধন করবেন। পাশাপাশি সেমিনারের মাধ্যমে এসব প্রতিনিধিকে অনলাইনে নিবন্ধন ও অনলাইনে ভ্যাট প্রদানের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় পাইলটিং শেষ হলে আগামী ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে ছোট-বড় সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য অনলাইনে মূসক রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এনবিআরের মূসক অনুবিভাগের হিসাবমতে, সারাদেশে প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থাকলেও ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ৩২ হাজার। এর মধ্যে নিবন্ধিত কিছু প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায়। কিছু প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিলেও ব্যবসা করে না। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট দেয় না।
ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পাইলিং হিসেবে বড় ১০৯টি কোম্পানি মূসক নিবন্ধন সনদ নিয়েছে। কিছু কোম্পানি-প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে সমস্যা ছিল। সহসাই তারাও নেবে।
তিনি জানান, গত ০৬ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার চারটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন বড় ৬০ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে ভ্যাট নিবন্ধন দেওয়ার আগে ওরিয়েন্টেশন করা হচ্ছে। নতুন আইন সম্পর্কে গাইডলাইন, প্রকাশনা ও গেজেট দিতে এ ওরিয়েন্টেশন চলছে।
এ কর্মকর্তা জানান, ওরিয়েন্টেশনের পর প্রতিদিন একটি করে কমিশনারেটের ৬০টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে নিয়ে আসা হবে। প্রকল্পের কার্যালয় ও লজিস্টিক ব্যবহার করে তারা নিজেরাই নিবন্ধন করবেন।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঢাকাসহ সারাদেশে ছোট-বড় সব মূসকদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইটে এ রেজিস্ট্রেশন উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। যে কেউ ঘরে বসে এ নিবন্ধন করা ও সনদপত্র নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
আরইউ/এএসআর