ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শ্রমিকরা নিজেদের ভুল বুঝে ফিরে এলে কারখানা খুলে দেবো

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
শ্রমিকরা নিজেদের ভুল বুঝে ফিরে এলে কারখানা খুলে দেবো বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান

থমথমে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষের মুখে অর্ধশতাধিক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

ঢাকা: থমথমে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষের মুখে অর্ধশতাধিক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

মুখোমুখি অবস্থানে শিল্প মালিক ও শ্রমিকরা। নূন্যতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকদের কর্মবিরতির মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য অর্ধ শতাধিক শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। চলতি পরিস্থিতি শিল্পের জন্য অশনি সংকেত। খোদ বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকেই এমন শংকার কথা বলছেন অনেকে।

প্রাণচাঞ্চল্য শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের এখন ঘুম ভাঙছে পুলিশের সাইরেনে। শ্রমিকদের পদচারণার বদলে সড়ক দখলে নিয়েছে পুলিশের রায়ট কার ও জল কামান। সর্তক অবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। সব মিলিয়ে এই শিল্প ঘিরে বিরাজ করছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা।

এ পরিস্থিতিকে কী নজরে দেখছে বিজিএমইএ? পরিস্থিতি উত্তোরণেই বা তাদের ভাবনাটা কি? এসব জানতে  বাংলানিউজ মুখোমুখি হয় দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের।

সমঝোতার মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫-১৬ মেয়াদে সংগঠনটির প্রধানের দায়িত্ব নেন স্টারলিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সিদ্দিকুর রহমান। আশুলিয়ায় চলমান শ্রমিক অসন্তোষের আঁচ থেকে বাদ যায়নি সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন স্টারলিং গ্রুপের পোশাক কারখানাও।

এর আগে শ্রমিক বিক্ষোভের নামে ২০০৬ সালের ২২ মে শ্রমিক নামধারী  ‘দুর্বৃত্তদের’ আগুন পুড়িয়ে দেয় সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন ‘বান্দো ডিজাইন’ নামের অপর একটি পোশাক কারখানা। সে যাত্রায় অল্পের জন্যে সন্তানসহ প্রাণে বেঁচে যান সিদ্দিকুর রহমান। পরে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কিছু সংস্কারের পর কারখানাটি ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা শেষে পূর্ণ যাত্রা শুরু করে সেই কারখানা। সব মিলিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের বলির তিক্ত আর ভয়ংকর অভিজ্ঞতা খোদ সিদ্দিকুর রহমানের ঝুলিতে।

সাক্ষাতকার নিয়েছেন বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট জাহিদুর রহমান।

বাংলানিউজ: কেমন আছেন? দু:খিত ভোরে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটালাম।
সিদ্দিকুর রহমান: আছি। আলহামদুলিল্লাহ। আসলেই ঘুমে ছিলাম (আড়মোড়া ভেঙ্গে)।

বাংলানিউজ: অসন্তোষের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ করে ঘুম হয়!

সিদ্দিকুর রহমান: আসলে এসব নিয়ে গত কয়েকটা দিন বেশ নির্ঘুম কাটাতে হয়েছে। ঘুমটা সেভাবে হয়নি। আর খবর কি? আশুলিয়ার পরিস্থিতি কি? (উল্টো সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলেন)

বাংলানিউজ: কারখানা বন্ধ করেই কি সমাধানের রাস্তা খুঁজছে বিজিএমইএ?

সিদ্দিকুর রহমান: আগেও এমন বন্ধ করে সমাধান হয়েছে। এবারো চেষ্টা চলেছে। শ্রমিকরা যদি কাজ না করে। সকালে এসে যদি কার্ড পাঞ্চ করে কাজ না করে। এভাবে দশদিন মানে মাসের তিন ভাগের একভাগ সময় অতিবাহিত করে। তাহলে মালিক মাসের বেতন দেবে কোত্থেকে!

বাংলানিউজ: শ্রমিকরা যে নূন্যতম মজুরির দাবি তুলেছে সেটাকে কতটুকু যৌক্তিক মনে করেন আপনারা?
 
সিদ্দিকুর রহমান: কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। কারণ দাবিটা তো আসতে হবে নিয়মমতো। কারণ ওয়েজ বোর্ড হয় ৫ বছর পর পর। আর এটা করার জন্যে একটা সিস্টেম আছে। সরকারের কাছে আবেদন করবে। সরকার সেটা দেখবে। পর্যলোচনা করবে। ক্রয় ক্ষমতা দেখবে। গত ওয়েজ বোর্ডের পরে সরকার বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। প্রতি বছর শ্রমিকদের ৫ ভাগ করে ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে। এখন আবার মুদ্রাস্ফীতি ৫ ভাগের মধ্যে। তাহলে তো তাদের অসুবিধা থাকার কথা না। আমরা যতোটা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ তো এ অসুবিধার কথা বলেনি। দাবি আদায়েও সব কিছুর একটা সিস্টেম আছে। হটাৎ করে সিদ্ধান্ত হলো কর্মবিরতির। তারা কারখানায় ঢুকলো। কার্ড পাঞ্চ করে হাজিরা দিয়ে আবার চলেও গেলো। এভাবে তো চলতে পারে না।

বাংলানিউজ: গণমাধ্যমের খবর-প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিজয়ের মাসে  শ্রমিক অসন্তোষ কেন?  আগেই কেন এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া হয়নি।

সিদ্দিকুর রহমান: না। প্রধানমন্ত্রী কোথাও এমন কথা বলেননি। বরং তিনি বলেছেন, শ্রমিকদের এ দাবি অযৌক্তিক। কারণ এ সময় ওরা এমন করতে পারে না। আমাদের সবকিছু ঠিকঠাক আছে।

বাংলানিউজ: বলছিলেন প্রতি বছর ৫ ভাগ করে ইনক্রিমেন্ট দিচ্ছেন। তারপর-ও........

সিদ্দিকুর রহমান: আমরা অদক্ষ শ্রমিকদের ৫ ভাগ করে ইনক্রিমেন্ট দিই। পাশাপাশি যারা দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন তাদের দিই ১০ ভাগ। তবে ৫ ভাগ ইনক্রিমেন্ট কিন্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবাইকেই দেওয়া হয়। যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ৫ ভাগের মধ্যে। তাহলে তাদের কষ্ট হওয়ার কথা নয়। তার ওপর ইউরোর দরপতন, ব্রেক্সিট, মার্কিন নির্বাচন, ভারতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে বড় ধরনের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে এ শিল্প। রানা প্লাজা ধসের পর অ্যাকর্ড, এলায়েন্সের নানামুখি চাপ। তার ওপর আবার হলি আর্টিজেন কাণ্ড। এর মধ্যে আবার অসন্তোষ। শ্রমিকরা আমাদের পার্টনার। আজ তাদের এ তৎপরতায় যদি কারখানার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফ্যাক্টারি অন্যদেশে চলে যায় তবে তারা মানে আমাদের শ্রমিক ভাই ও বোনেরা ও সরকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মালিক মাত্র দুই হাজার আড়াই হাজার। কোনো না কোনোভাবে তাদের দিন চলে যাবে। সেই জিনিসটা তো সবাইকে বুঝতে হবে।

দ্বিতীয় অংশ পড়তে ক্লিক করুন >>

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।