ঢাকা: ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম, কেনা-বেচা এবং বুকিংয়ের মধ্যদিয়ে শেষ হলো আবাসন খাতের সব থেকে বড় আয়োজন রিহ্যাব মেলা। এ মেলায় তিন থেকে চার হাজার কোটি কোটি টাকার প্লট-অ্যাপার্টমেন্ট কেনা-বেচা, বুকিং এবং ঋণ ট্রানজেকশন হয়েছে।
‘স্বপ্নীল আবাসন সবুজ দেশ, লাল সবুজের বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসসি) পাঁচদিনের এই রিহ্যাব মেলা অনুষ্ঠিত হয়। রিহ্যাব সেক্রেটারিয়েট থেকে জানানো হয়, এবারের মেলায় ২৬ হাজার ক্রেতা দর্শনার্থী আসেন।
আর গত সাত বছরে এবারের মেলায় ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। আবাসন খাতের যে মন্দাভাব তা এই মেলার মধ্যদিয়ে কেটে উঠাও সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই মেলা শেষ হয় রোববার (২৫ ডিসেম্বর)। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এই মেলার আয়োজন করে।
বড়দিন উপলক্ষে ছুটি থাকায় মেলার পঞ্চম ও শেষ দিনে দুপুরের পর দর্শনার্থী-ক্রেতাদের ঢল নামে মেলায়। প্লট-অ্যাপার্টমেন্ট কেনা এবং হোম লোনের তথ্য জানার জন্য আগ্রহীরা ভিড় জমান। মেলায় ছোট এবং মাঝারি সাইজের ফ্ল্যাটের চাহিদা ছিল বেশি। মেলা উপলক্ষে নানা ধরনের ছাড়া দেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
পাঁচদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে রিহ্যাবের ডিরেক্টর এবং রিহ্যাব মেলা-২০১৬’র স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান শাকিল কামাল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার বুকিং হয়েছে। এছাড়া আরও দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার অফার বুকিং এসেছে।
গত কয়েক বছরে আবাসন খাতে যে মন্দাভাব ছিল তাও কেটে গেছে বলে মনে করে রিহ্যাব।
মেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, মন্দাভাব কাটিয়ে এই মেলার মাধ্যমে সুফল পাওয়া শুরু করেছি। তৈরি প্রকল্পগুলোর মেলার মাধ্যমে গ্রাহকদের হাতে চলে যাবে। মেলায় ভালো সাড়া পাওয়ায় নতুন-নতুন প্রকল্প হাতে নিতে পারবো।
বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের মেলায় তুলনামূলক ভালো সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে রিহ্যাব।
রিহ্যাবের ডিরেক্টর এবং রিহ্যাব মেলা-২০১৬’র কো-চেয়ারম্যান (প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যান্ডিং কমিটি) কামাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিগত ৫-৭ বছরের যে রেসপন্স, তার চাইতে সব ভালো রেসপন্স পাওয়া গেছে এবার। প্রতিটি স্টলে ২-৩টি, কোনোটিতে ৪-৫টি বুকিং পাওয়া গেছে। ’
তিনি বলেন, এবারের মেলায় আমরা প্রচুর সাড়া পেয়েছি। আমরা যতটুকু আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি ক্রেতা দর্শনার্র্থী মেলায় এসেছেন।
গত কয়েক দিনে দর্শনার্থীদের আগমন ও সাড়া নিয়ে কামাল মাহমুদ বলেন, প্রচুর পরিমাণে ক্রেতা-দর্শনার্থীর আগমনে আবাসান খাত ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখছি। প্রত্যেক স্টলে কম-বেশি বিক্রি হয়েছে।
দেশের মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে রিহ্যাব দেশের বাইরেও মেলা আয়োজন করতে যাচ্ছে। মার্চে সৌদি আরব, মে মাসে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করা হবে।
আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব এর সব থেকে বড় এই আয়োজন ঘিরে প্রথম দিন থেকেই জমে উঠে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ভালো সাড়া পাওয়া যায়।
দর্শনার্থীরা অ্যাপার্টমেন্ট-প্লটের খোঁজ-খবর নেওয়া ছাড়াও বুকিংও দেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জমাদি এবং হোম লোনের তথ্য পাওয়া যায় মেলায়।
রিহ্যাবের জনসংযোগ কর্মকর্তা রশিদ বাবা বলেন, মেলায় ছিল ১৭৫টি স্টল। মেলায় ৩০টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। মেলায় কো-স্পন্সর হিসাবে অংশ নেয় ২৪টি প্রতিষ্ঠান।
তুলনামূলক কিস্তি সুবিধা, কম দাম এবং সহজলভ্য অ্যাপার্টমেন্টগুলো ক্রেতাদের পছন্দে আসছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এক ছাদের নিচে আবাসনের অ্যাপার্টমেন্ট-প্লট এবং নির্মাণ সামগ্রী ও হোম লোনের তথ্য পেয়ে আবাসন ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি খুশি ক্রেতা-দর্শনার্থীরাও।
এন্ট্রি টিকিটের রাফ্রেল ড্র’তে প্রতিদিন আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সন্তোষ থাকলেও মেলার মধ্যে কোনো টয়লেট ব্যবস্থাপনা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।
** মধ্যবিত্তের ফ্ল্যাটের স্বপ্ন বুনছে রিহ্যাব মেলা
**‘আবাসন ব্যবসা ডিসেন্ট্রালাইজড করলে ঢাকায় চাপ কমবে’
**দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পেলে মধ্যবিত্তের বেশিরভাগই ফ্ল্যাট কিনবে
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬
এমআইএইচ/টিআই