ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে ১৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারের কোনো হদিস নেই। সব উৎস থেকে অর্থ প্রাপ্তির পর এ ১৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন উদ্ধারে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
এছাড়াও আন্তঃব্যাংক আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক ‘সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড-ওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন’ (সুইফট) এর বিরুদ্ধে মামলা করার আইনগত দিকগুলো খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে চুরি হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে গঠিত আন্ত:সংস্থা টাস্কফোর্সের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে আদালতের নির্দেশে ফিলিপাইনের ইস্টার্ন হাওয়াই (বিনোদন কেন্দ্র) নামে এক ক্যাসিনোর প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল ম্যানেজার কিম অং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কাউন্সিল মামলায় ১৪ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার ফেরত দিয়েছে। তা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইর্য়কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা হয়েছে।
কিম অং এর কাছে থাকা আরও ৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারে তার নাগরিকত্ব বাজেয়াপ্ত করার মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) কাছে জমা ছিল। তা ফেব্রুয়ারি মাসেই আরসিবিসি বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দিয়েছে।
ফিলিপাইনের সোলাইর রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনোতে গেছে ২৮ মিলিয়ন ডলার। যদিও এরমধ্যে ২ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার ক্যাসিনো কর্তৃপক্ষ ফেরত দিতে রাজি হয়েছে। বাকি অর্থ ক্যাসিনোর খেলোয়াড়রা নিয়ে গেছেন। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দেশটির আদালত এ ক্যাসিনোর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে।
স্থানীয় রেমিটেন্স কোম্পানি ফিলরেমের কাছে থাকা বাকি ১৭ মিলিয়ন ডলার কাউকে না দিয়ে নিজেদের কাছে রেখেছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কাউন্সিল ফিলারেমের মালিক ও কমপ্লায়েন্স অফিসারের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের ও অর্থ উদ্ধারে নাগরিকত্ব বাজেয়াপ্ত করার মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সব মিলিয়ে ৬৫ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলার হলেও ১৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার কোথায় রয়েছে তার সর্বশেষ অবস্থান সর্ম্পকে নিশ্চিত হতে পারেনি টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রালয়।
টাস্কফোর্সের সভায় সুইফটসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কোনো বাধা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বাংলানিউকে বলেন, ফিলিপাইন সরকার বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত আন্তরিক এবং এ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
এছাড়াও দেওয়ানী ও ফৌজদারিসহ যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করে রিজার্ভের লন্ডারকরা অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দিতে ফিলিপাইন সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সবোর্চ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেন জানান শুভঙ্কর সাহা।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ৮১ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান। দায়িত্ব অববেহলার কারণে বরখাস্ত করা হয় দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনিন সুলতানাকে।
রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে এবছরের ১৩ এপ্রিল সাত সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। এর দায়িত্ব হলো চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উপায় ও করণীয় নির্ধারণ করা।
আর এ টাস্কফোর্সকে সব ধরনের সাচিবিক সহায়তা দিবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’।
আন্ত:সংস্থা টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ইউনিট’-এর মহাব্যবস্থাপক কমিটির সদস্য সচিব।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
এসই/এসএইচ