কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীরা যেন এসব স্থানে ব্যবসা নিয়ে আসেন, সে লক্ষ্যে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কারওয়ানবাজার থেকে মহাখালীর নবনির্মিত কাঁচাবাজারে আসতে অনীহা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
কারওয়ানবাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নতুন স্থানে ক্রেতা না পাওয়া, পুরনো ক্রেতা হারিয়ে ফেলা, নবনির্মিত কাঁচাবাজার ব্যবসাবান্ধব না হওয়া ও পজিশনের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় সরতে চান না ব্যবসায়ীরা।
চালের আড়তদার চাঁদপুর ট্রেডার্সের মালিক হাজী আমিন মিয়াজি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে কারওয়ানবাজারে চাল বিক্রি করি। মহাখালীতে গেলে ক্রেতা পাবো কোথা থেকে?। আমার বাপে এখানে ব্যবসা করছেন, আমিও করি’। আল্লাহ যতোদিন বাঁচিয়ে রাখবেন, আমরা এখানেই থাকবো, কোথাও যাবো না’। ২০০৬ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুনের মধ্যে দোকান স্থানান্তরের এ কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে কাঁচাবাজারের সংখ্যা চার থেকে নামিয়ে আনা হয় তিনে। আর এজন্য প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয় ১২৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে যাত্রাবাড়ী, আমিনবাজার (গাবতলী) ও মহাখালীতে তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণের পরিকল্পনা হয়।
মূল প্রকল্পে চারটি বাজারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পরের ধাপে তিনটি বাজার নির্মাণ করতেই ব্যয় ধরা হয় ৩৩১ কোটি ০৮ লাখ টাকা।
তবে যাত্রাবাড়ীর কাজ অনেক বাকি। ফলে ফের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩৫০ কোটি টাকা। সময় বেঁড়ে হচ্ছে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্মাণ শেষ হওয়া আমিনবাজার (গাবতলী) ও মহাখালী পাইকারি কাঁচাবাজারেও ব্যবসার স্পেস কম এবং দাম বেশির কারণে যেতে যাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। প্রতি বর্গফুট পজিশনের দাম হাঁকা হচ্ছে ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা। দোকানের স্পেসও ১১০ থেকে ১২০ বর্গফুটের বেশি নয়, যেটিকে পাইকারি কাঁচাবাজারের জন্য ব্যবসাবান্ধব বলে মনে করেন না ব্যবসায়ীরা।
কারওয়ানবাজার ক্ষুদ্র আড়ৎ কাঁচামাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহাখালী ও গাবতলীতে স্থানান্তরিত হওয়ার কোনো পরিবেশ নেই। এতো টাকা দিয়ে পজিশন কেনার সামর্থ্যও আমাদের নেই। আমরা প্রতি বর্গফুটের দাম চার হাজার টাকা দিতে পারবো। এছাড়া এতো ছোট দোকান দিয়ে আমরা কি করবো? ফুলকপির দুই ঢোপ (সবজির ঝুড়ি) রাখলেই তো দোকানের আর কিছু থাকে না’।
তিনি বলেন, ‘কারওয়ানবাজার স্থানান্তরের শর্ত দিয়ে নতুন মার্কেট তৈরি হয়নি। তাছাড়া যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তা মেনে নতুন কাঁচাবাজার তৈরি হয়নি। লালবাগে একটি কাঁচাবাজার তৈরির কথা ছিলো, সেটি কোথায়? নতুন নির্মাণ করা কাঁচাবাজার ব্যবসাবান্ধব না। ফলে, একজন ব্যবসায়ীও সেখানে যেতে চান না’।
ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মেসবাউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের সামান্য কিছু ফিনিশিং কাজ বাকি। যার ফলে কিছু ব্যয় বাড়ছে’।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় নির্মাণাধীন কাঁচাবাজারের কাজসহ বাড়তি সময়ে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পূর্ণ হবে বলেও আশাবাদী তিনি।
ব্যবসায়ীদের স্থানান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অনেকে কারওয়ানবাজার ও মহাখালীতে ব্যবসা করছেন। পুরনো স্থান ছেড়ে কেউ যেতে চান না। তবে, আমরা আশা করছি, ধীরে ধীরে সবাই নতুন কাঁচাবাজারে আসবেন। আমরা ব্যবসায়ীদের বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি’।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
এমআইএস/পিসি/এএসআর