অক্টোবরের দিকে চরে আসতে শুরু করেন জেলেরা। সাতক্ষীরা, পাইকগাছা, কয়রা, ঝালকাঠী, বরিশাল, মংলা প্রভৃতি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তারা আসেন।
এই পাঁচ মাসের ক্ষণস্থায়ী চর জীবনে জেলে, ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টরা পরিবার-পরিজন ছেড়ে চলে আসেন এখানে। তখন জেলে নৌকো, জাল ও সাগরই তাদের সব। এরপরও শত শত মাইল দূরে ছেড়ে আসা প্রাণের মানুষদের সঙ্গে বন্ধন অটুট রাখে সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক ও বিকাশ। অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠন বিকাশ যেহেতু মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ফোনের মাধ্যমে তাদের সেবা দিয়ে থাকে, এজন্য বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চারিত হয় টেলিটকের নামও।
বাড়িতে টাকা পাঠানো, ব্যবসায়িক অর্থ লেনদেন, মোবাইল রিচার্জ থেকে শুরু করে আড়তদারদের কাছ থেকে মাছের দাম নেওয়া- সবই তারা সারেন বিকাশের মাধ্যমে।
দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে মোবাইল আর নেটওয়ার্ক কাভারেজ রয়েছে প্রায় ৯৮ শতাংশ এলাকায়। কাজেই বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা ও সুন্দরবনের একদম শেষ মাথার এ চরও বিকা
ট্রলারযোগে দুবলার চর থেকে মংলা বা খুলনা যেতে লেগে যায় আট-নয় ঘণ্টা। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা কাঁচাবাজার, সদাইপাতি ও অন্যান্য সামগ্রী আনা-নেওয়া করতে নিজে যেতে পারেন না। এক্ষেত্রে মংলা বা খুলনা থেকে দুবলার চর আসা কোনো ট্রলারে মালামাল তুলে দেন দোকানিরা, টাকা চলে যায় বিকাশে। দুবলার চরের সবজি বিক্রেতা খোরশেদ আলীসহ বাকিরাও এভাবে লেনদেন করেন বলে তিনি জানান।
চরে রাষ্ট্রীয় একটি ব্যাংকের মোবাইল মানি ট্রান্সফারের পোস্টার নজরে এলেও, এই সুবিধা কাউকে নিতে দেখা গেলো না!
এখানকার বিকাশ এজেন্ট মইনুলের ভাষ্য, সবাই বিকাশেই টাকা লেনদেন করে।
শিব বাজার হলো দুবলার চরের মূল বাজার। ছয় হাজার তিনশো বাসিন্দার প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী বাজারে দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এখানে তিন-চারটি বিকাশ এজেন্ট রয়েছে। সবসময় কেউ না কেউ টাকা পাঠাচ্ছে বা তুলছে।
বিকাশ তাদের কোম্পানি প্রোফাইলে মূল উদ্দ্যেশ্যের ঘরে লিখেছে- বিকাশ হলো বাংলাদেশের মানুষের জন্যে ব্যাপক পরিসরে আর্থিক সেবা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীকে সুবিধাজনক, সাশ্রয়ী, এবং নির্ভরযোগ্য সেবা দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা।
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া- বিকাশের বিকাশমান সেবা থেকে বঞ্চিত নয় কেউই। দুবলার চরের মতো দুর্গম অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে তাদের সেবা।
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিকাশ তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থেকে যে সরে যায়নি, বরং আরও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ চলেছে- সেটিই জোর দিয়ে বললেন বিকাশের সিইও কামাল কাদীর। নতুন বছরের শুরুর দিনে রাজধানীতে বিকাশের সদর দফতরে বাংলানিউজের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন তিনি।
চরের কানার মাথা দিয়ে শিব বাজারে হেঁটে যেতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট। শুঁটকির আড়তগুলো এদিকটায়। গেলো বিজয়ের মাসের ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাজার ঢোকার মুখে সিঙারা-জিলাপির দোকানে দেখা হয়েছিল পাইকগাছার গৌতমের সঙ্গে। ঘণ্টাঘানেক বাদে বাজারে আবার দেখা। বিকাশের দোকান থেকে বের হচ্ছে। চোখাচোখি হতেই হেসে বললেন, বাড়ি টাকা পাঠালাম। ছাওয়ালডার ঠাণ্ডা লাগিছে। কাশিও হয়ছে শুনলাম।
তার উত্তরে বিকাশ নির্ভরতার চিত্র টের পাওয়া যায়। নওশের, প্রশান্ত, সাদিউলদের একই গল্প একই। বিভিন্নভাবে তাদের মতো শ্রমজীবী মানুষের লেনদেনকে সহজ করে দিয়েছে বিকাশ।
আরও পড়ুন
** বিকশিত বিকাশের গল্প
** চাষির হাতেও ডিজিটাল মানি
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭
এসএনএস