ঢাকা: পুঁজিবাজারে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি চালুর ফলে কয়েকটি কোম্পানি লাভবান হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বাজারে আসার আগেই অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ছে।
এরই মধ্যে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসা ওশান কন্টেইনার লিমিটেড (ওসিএল) ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল) শেয়ার কিনে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজি খুইয়েছেন হাজার হাজার ুদ্র বিনিয়োগকারী।
অথচ কোম্পানি দুইটি মাত্র ২৩৪ কোটি টাকার অভিহিত মূল্যের শেয়ার ছেডে বাজার থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে এই পদ্ধতির পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালায় ডিএসই ও এসইসি। উভয় পক্ষ থেকে বলা হয় এই পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানি বাজারে আসলে কোম্পানি ও বিনিয়োগকারী উভয়ই উইন উইন (দু’পক্ষই লাভবান) অবস্থায় থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি।
মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরিফ খান এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, সারাবিশ্বে পুঁজিবাজারে বুকবিল্ডিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারেনি। বিনিয়োগকারীদের বদলে লাভের পাল্লা বরং কোম্পানিগুলোর দিকেই ভারি হয়েছে। ’
এজন্য পদ্ধতিটির প্রয়োগের দিকটিই দায়ী বলে মনে করছেন তিনি।
এই পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত ওসিএল ও কেপিসিএল বাজারে আসার আগে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল যথাক্রমে ২ টাকা ৪০ পয়সা ও ২ টাকা ৭৯ পয়সা। বাজারে আসার আগে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ওসিএল এবং কেপিএল এর প্রতিটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারিত হয় যথাক্রমে ১৪৫ টাকা ও ১৯৪ টাকা।
এতে করে লেনদেন শুরুর আগেই ওসিএল ও কেপিসিএল-এর পিই রেশিও যথাক্রমে ৬০ ও ৬৯-এ দাঁড়ায়। যা বাজারের গড় পিই রেশিও’র প্রায় আড়াই গুণ।
গত ৪ মার্চ ওসিএল এর লেনদেন শুরু হয়। এর মধ্যে প্রথম চার দিন এ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম গড়ে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে উঠানামা করে। এরপর ক্রমেই দর পড়তে থাকে কোম্পানিটির। গতকাল বৃহস্পতিবার ওসিএল এর প্রতিটি শেয়ার মাত্র ১৬০ টাকায় লেনদেন হয়।
একই ঘটনা দেখা যায় কেপিসিএল-এর ক্ষেত্রেও। গত ১৮ এপ্রিল বাজারে আসার পর প্রথম চার দিন ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে শেয়ার লেনদেন হয়। এরপর দর পতনের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার এ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয় মাত্র ১৫৯ টাকায়।
লেনদেন শুরুর সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ওসিএল-এর শেয়ারের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে ২ মাসে কেপিসিএল’র শেয়াররের দাম কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ।
আইপিওতে না আসায় প্রথম তিন কার্যদিবসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কোনো শেয়ার না থাকায় তারা কোম্পানি দুইটির শেয়ার কিনতে পারলেও বিক্রি করতে পারেননি। কেনা শেয়ার যখন ম্যাচিউরড্ (বিক্রির সময়) হলো ততদিনে কমে গেছে দাম। তাই বিক্রি করতে হয়েছে লোকসানে। ফলে লাভের বদলে বিনিয়োগকারীরা হয়েছেন ক্ষতির শিকার।
কোম্পানি দুইটির শেয়ারের দাম কমার ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে গত ১৪ জুন বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তৃতীয় কোম্পানি হিসেবে তালিকাকাভুক্ত হয়েছে আরএকে সিরামিকস। প্রথমদিন এর শেয়ারের দাম ২০০ থেকে ২৩৫ টাকার মধ্যে উঠানামা করলেও দ্বিতীয় দিনেই দাম কমতে শুরু করে। গত বুধবার কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৬৫ টাকায় নেমে যায়। বৃহস্পতিবার অবশ্য কিছুট বেড়ে আরএকে সিরামিকস-এর শেয়ারদর ১৯১ টাকায় দাঁড়ায়।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণের জন্য অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো কোম্পানির ফান্ডামেন্টালের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীনভাবে শেয়ারের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসইসির আইনে বলা হয়েছে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মূল্য নির্ধারণের (ইন্ডিকেটিভ প্রাইস) জন্য ৩ ক্যাটাগরির কমপক্ষে ৫টি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাধ্যতামুলক।
গত ৪ মাসে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে ৩টি কোম্পানি তালিকাভুত্ত হওয়ার পর সম্প্রতি এসইসি বুক বিল্ডিং পদ্ধতির কিছুটা সংশোধনী এনেছে।
এ ব্যাপারে এসইসির সদস্য মো. মনসুর আলম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, শুরুতে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাইজ নির্ধারণে কিছুটা সমস্যা ছিল। যে কারণে কোনো কোনো কোম্পানির ইন্ডিকেটিভ প্রাইস যুক্তিসঙ্গত ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি এসইসি এই পদ্ধতিতে কিছুটা সংশোধনী এনেছে। ফলে ভবিষ্যতে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আরো স্বচ্চতা আসবে।
চট্রগ্রামক স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সভাপতি ফকরউদ্দিন আলী আহমেদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিটি একটি ভালো পদ্ধতি হলেও বাংলাদেশে এই পদ্ধতির প্রয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে এসইসি সম্প্রতি তাতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনায় ভবিষ্যতে আর বির্তক হবে না বলে মনে করছি।
বাংলাদেশ সময় ১৪৫৬৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১০
জিএস/এমএমকে/জেএম