ভারত সরকার সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মের্সাস ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেডকে (নাফেড) রপ্তানির দায়িত্ব দিয়েছে। নাফেদ দেশটির বিভিন্ন রাজ্য থেকে চাল সংগ্রহ করে বাংলাদেশে রপ্তানি করবে।
রপ্তানির ব্যবস্থা চূড়ান্ত করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে।
ওই চিঠির আলোকে চালের দাম ও আমদানির দিনক্ষণ নির্ধারণের জন্য ১৫ অক্টোবর প্রস্তাবিত একটি বৈঠকের ব্যাপারে সম্মতি জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে নাফেড কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে খাদ্যসচিব মোহাম্মদ কায়কোবাদ হোসেন ৩ অক্টোবর নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনেও চিঠি পাঠিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে চালের মজুদ বাড়াতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মজুদ বাড়াতে ভারত থেকেও চাল আমদানি করা হবে। সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে আমদানি করা এই চালের জন্য কোনো দরপত্র আহবান করা হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যসচিব মোহাম্মদ কায়কোবাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চাল আমদানির খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনার জন্য ১৫ অক্টোবর নাফেদ কর্তৃপক্ষকে প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা আসার পরে ঠিক করা হবে দরদাম, সময় ও পরিমাণ।
তিনি আরও বলেন, ভারত সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান পিইসির কাছ থেকে আপাতত ১ লাখ টন চাল আমদানি করতে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ৬০ দিনের মধ্যে এই চাল দেশে এসে পৌঁছবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া থেকে আমদানি সময় ও পরিবহন খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। সেদিক থেকে প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় ভারতে থেকে বাংলাদেশে চাল আমদানি অত্যন্ত সুবিধাজনক। একইসঙ্গে তা কম সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। ভারত থেকে সমুদ্রপথে পণ্যবাহী জাহাজ মাত্র একদিনে এবং সড়কপথে ৩-৪ দিনে বাংলাদেশে চাল পৌঁছাতে পারে। তাই আপাতত ভারত থেকেই চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয় সুত্র জানায়, হাওরাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ এবং দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, দিনাজুপর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, নাটোর, নীলফামারী,গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, শেরপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাহাড়ি ঢল ও আকস্মিক ভারী বন্যায় চলতি বছরে ধান উৎপাদন প্রায় ২০ লাখ টন কম হয়েছে।
এসব জেলায় রবি ও বোরো মৌসুমে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করতে ১শ ৩৬ কোটি টাকার বোরো বীজ, ডিএপি, এমওপি সার ও নগদ সহায়তা ঘোষণা করেছে সরকার।
প্রসঙ্গত, এ বছর সরকার এক কোটি ৯১ লাখ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় প্রায় ২০ লাখ টন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার আমদানি-শুল্ক দুই দফা কমিয়েছে। প্রথমে ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে। পরে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করেছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত চালের আমদানি শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, একটি বিষয় পরিষ্কার হতে হবে, তা হলো চাল আমদানির অর্থ এই নয় যে, এখানে সঙ্কট আছে। আপদকালে বাজারে সরবরাহ করার মতো পর্যাপ্ত চাল সরকারি গুদামে মজুদ আছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে খুব কমন চালের দাম ৫০ টাকা কেজি। চার মাস আগে এর দাম ছিল ২৮ টাকা। অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৮ শতাংশেরও বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৭
জেএম/জেএম