আগামী ১০ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে এ সম্মেলন শুরু হবে। এ উপলক্ষে সোমবার (০৪ ডিসেম্বর) বিকালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতি বাণিজ্যমন্ত্রী এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান ও চাওয়া-পাওয়া নিয়ে বক্তব্য দেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সর্বোচ্চ বৈঠকে অংশ নিতে যাওয়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের বুয়েন্স আয়ার্স সম্মেলনে রুলস্ অব অরিজিন ও স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেন্সিয়াল ট্রিটমেন্টের সুবিধা বাস্তবায়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখে ই-কমার্স সক্ষমতা বাড়ানো এবং ডব্লিউটিও’র প্রতিশ্রুতি অনুসারে এলডিসি’র দেশগুলোর জন্য সব সুবিধা কার্যকর করার বিষয়েও বাংলাদেশের বক্তব্য থাকবে।
দুই বছর পর ডব্লিউটিও’র মন্ত্রী পর্যায়ের এ সম্মেলন বসতে যাচ্ছে আগামী ১০-১৩ ডিসেম্বর। সম্মেলনে যোগ দিতে বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২৫ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ০৯ ডিসেম্বর ঢাকা ছাড়ছেন।
‘ডব্লিউটিও'র সম্মেলনে বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব দাবিগুলোই জোরালোভাবে তুলে ধরবে। তবে এবারের সম্মেলন থেকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য এলডিসিভুক্ত দেশ কতোটা সুফল পাবে- তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ডব্লিউটিএ থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সারা বিশ্ব সংস্থাটির ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা দিলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য পাঠাতে হয়। আমরা এ বিষয়ে জোরালো বক্তব্য রাখবো’- বলেন তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, ডব্লিউটিও এখন আগের মতো কার্যকর অবস্থায় নেই। অনেক দেশ ডব্লিউটিও'র বিকল্প প্লাটফর্ম হিসেবে আঞ্চলিক ও বাইলেটারাল সম্পর্ক গড়ে তুলছে। তারা আঞ্চলিক, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। ফলে অনেক দেশের অবস্থান ডব্লিউটিও'র বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডব্লিউটিও'র সদস্য হিসাবে সংস্থাটির প্রদেয় সব রকম সুবিধা ভোগ করছি। এ সংস্থার কাছ থেকে আমাদের প্রাপ্তি অনেক। তবে বিশ্বের প্রায় সব দেশ আমাদেরকে ডব্লিউটিও'র বিধান অনুসারে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিলেও একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র আমাদেরকে এ সুবিধা দেয় না। যেটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ও ডব্লিউটিও'র নীতি বিবর্জিত। আর্জেন্টিনায় ডব্লিউটিও'র সম্মেলনে আমরা এ ইস্যুতে জোরালো ফাইট করবো’।
এক প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করলে এবং এর গ্রেস পিরিয়ড সুবিধাসহ ২০২৪ সাল পার হলে আমরা আর ডব্লিউটিও থেকে এলডিসি’র সুবিধা পাবো না। তখন আমাদেরকেও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বিকল্প চিন্তা করতে হবে। এজন্য আমরা নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তখন ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশে আমরা জিএসপি প্লাস সুবিধায় প্রবেশ করবো’।
‘এছাড়া বাংলাদেশও তখন আঞ্চলিক, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ওপর গুরুত্ব দেবে। যার প্রস্তুতি আমরা শুরুও করেছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সেই সক্ষমতায় বাংলাদেশ অনেকটাই পৌঁছে যাবে’।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়েও কথা বলেন তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, সারা বিশ্ব এখন বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে প্রশংসা করছে। সর্বশেষ পোপ ফ্রান্সিসও বাংলাদেশে এসে প্রশংসা করেছেন। তখনও একটি দল দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে।
বিএনপির মির্জা আব্বাস বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে নাকি আওয়ামী লীগের লোকও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন না। এর জবাবে তোফাযেল আহমেদ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাহলে তোমরা কেন নির্বাচনে আসছো না? তোমরা তো জানো, আওয়ামী লীগের লোকরাও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন না। এসব মায়াকান্না করে কোনো লাভ নেই, নির্বাচন হবেই। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানেই নির্বাচন হবে’।
অন্যদিকে বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন, আইনের মাধ্যমে যদি খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচন তো হবেই না, আওয়ামী লীগকে চড়া মূল্য দিয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে।
এ বক্তব্য খণ্ডন করে তিনি বলেন, ‘আইনের মাধ্যমেই যদি সাজা হয়, তাহলে সেটা তো দেবেন বিচার বিভাগ। সেখানে আওয়ামী লীগকে কেন চড়া মূল্য দিতে হবে?’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৭
আরএম/এএসআর