ঢাকা, রবিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নৈতিকতায় ঘাটতির কারণে ব্যাংকে আর্থিক অনিয়ম বাড়ছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
নৈতিকতায় ঘাটতির কারণে ব্যাংকে আর্থিক অনিয়ম বাড়ছে বিআইবিএম মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতার ঘাটতির কারণে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা বাড়ছে। প্রায় ৭৩ শতাংশ ব্যাংকারের ধারণা, ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা ঘাটতির কারণে আর্থিক অনিয়মের ঘটনাগুলো বেড়েই চলেছে।

বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
 
বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘করর্পোরেট ইথিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইন ব্যাংকস: বাংলাদেশ পারসপেক্টিভ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রতিবেদনটি উত্থাপন করা হয়।

 

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উত্থাপন করেন বিআইবিএম-এর পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা ঘাটতির কারণে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা বাড়ছে। অনিয়ম করলেও শাস্তি না হওয়াকে আর্থিক অনিয়মের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।  

এছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে- সচেতনতার অভাব, নৈতিকতা বিষয়ে উৎসাহ প্রদানের অভাব এবং ব্যাংকারদের অল্প বেতন-ভাতা এর জন্য দায়ী।  

প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য ২০০ জন ব্যাংকারের সাক্ষাতকার নিয়েছে বিআইবিএম।
 
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকিং ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে আস্থার উপর নির্ভরশীল। আমানতকারীদের আস্থার সংকট শুরু হলে ব্যাংকিং ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়ে। সম্প্রতি একটি ব্যাংকে আমানতকারীদের মধ্যে আস্থা সংকটের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ব্যাংকটি।  

‘গ্রাহকরা আমানতের অর্থ ফিরিয়ে নিতে চাইলেও ব্যাংকটি চাহিদা মতো সেই অর্থ ফিরিয়ে দিতে পারছে না। এই সংকট ব্যবস্থাপনা ব্যাংকটির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’
 
তিনি বলেন, আমদানি-রফতানিভিত্তিক অর্থপাচারের অভিযোগ প্রায়ই উঠছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রেই এই অভিযোগটা সবচেয়ে বেশি। তবে অর্থ পাচার নিয়ে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তা অনেকাংশেই সত্য নয়।  

‘সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে পরিমাণ অর্থ রাখার কথা বলা হয় তার পরিমাণ অতো বেশি হবে না। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে,’ বলেন এই কর্মকর্তা।  

তিনি বলেন, অর্থপাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় কঠোর অবস্থানে থাকে। সব ধরনের অর্থপাচার ঠেকাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজ করছে।
 
সভাপতির বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানকার বোর্ড সুশাসন বাস্তবায়নের পরিবর্তে ঋণ অনুমোদন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বিশ্বব্যাপী ব্যাংকের বোর্ডের মূল কাজ হলো নীতি প্রণয়ন এবং নজরদারি করা। কিন্তু বাংলাদেশে সুশাসনের সংস্কৃতির প্রচলন নেই।
 
সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী বলেন, মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় সবখানেই দেখা দিয়েছে। ভোগবাদী অর্থনীতির কারণে মানুষ সবকিছুই ভুলে যাচ্ছে। দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির কারণে ব্যাংকের উপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। ব্যাংকের উপর মানুষ এখন আর ভরসা করতে পারছে না। এর উন্নতি করতে হবে।  

মানুষের কষ্টের কথা শোনার জন্য আর্থিক ন্যায়পাল গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
 
অনুষ্ঠানে মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. নুরুল আমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী এবং আহমেদ কামাল খান চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
এসই/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।