ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘হটলাইনে’ প্রান্তিক খামারিদের কথা শুনবেন নারায়ণ চন্দ্র

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮
‘হটলাইনে’ প্রান্তিক খামারিদের কথা শুনবেন নারায়ণ চন্দ্র মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (ফাইল ফটো)

ঢাকা: শেষবার যখন বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন তিনি প্রতিমন্ত্রী। কথা বলেছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপপুঞ্জের রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায়। বছর না ঘুরতেই এবার তিনি পূর্ণমন্ত্রী। এবার দেশের মাটিতেই নিজ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা নিয়ে বাংলানিউজের মুখোমুখি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। 

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শিক্ষক নেতা। রাজনীতিতে হাতে খড়ি ৬০ এর দশকের শেষ দিকে, আওয়ামী লীগের মাধ্যমে।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ছয়বারের চেয়ারম্যান। ডুমুরিয়া-ফুলতলা আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য। সাদাসিধে জীবন যাপন। বয়স বাড়ছে, কিন্তু পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাজের পরিধি। আগের তুলনায় চোখে মুখে-ও বেশ উজ্জ্বলতা। দিনক্ষণ গুনে ঠিক দেড় মাস পর পা রাখবেন ৭৩-এ। তা সত্ত্বেও মনে হয় যেন বয়সকে কমিয়ে এনেছেন। সাভারে প্রকল্প পরিদর্শনে এসে একটি প্রকল্প থেকে অপর প্রকল্প পর্যন্ত হেঁটেই চললেন জোর কদমে। তার সঙ্গে পা মেলাতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকে। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতা:

বাংলানিউজ: মন্ত্রণালয় নিয়ে নতুন কোন পরিকল্পনা?

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ: প্রান্তিক খামারিদের আরও কাছিকাছি যেতে চাই। তারাই তো আমাদের প্রাণ। প্রয়োজনে আমার একটি নম্বর থাকবে খামারিদের কাছে। হতে পারে সেটা হটলাইন। সেখানে ফোন করে মাঠের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমাকে সরাসরি যে কোনো অভিযোগ জানাতে পারবেন। আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি, হটলাইনে যেমন অভিযোগ জানাতে পারবেন, তেমনি নিতে পারবেন সহায়ক নানা পরামর্শও।

বাংলানিউজ: মাঠ পর্যায়ের সেবা প্রাপ্তি নিয়ে তো প্রান্তিক পর্যায়ে অনেকেরই অভিযোগ আছে?

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ: অভিযোগ রয়েছে, এটা মন্ত্রণালয়ও জানে। অধিদপ্তরও জানে। অনেকেই ঠিকমতো কাজ করেন না। মাঠ পর্যায়ে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হটলাইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

বাংলানিউজ: কিন্তু জনবল স্বল্পতাও তো যথাযথ সেবা নিশ্চিতের পথে একটা বড় অন্তরায়

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ: তা ঠিক। আসলে দেশে গরু-ছাগল বেড়েছে। বাড়েনি কেবল আমার জনবল। সেই পুরনো ছকেই কিন্তু চলছে মাঠ পর্যায়ের অফিসের কাঠামো। একজন মাত্র কর্মকর্তা আর ভিএস দিয়ে চলছে কার্যক্রম। সীমিত জনবল দিয়ে গোটা উপজেলার কার্যক্রমকে বেগবান করা কিন্তু খুবই কষ্টকর। আমরা চেষ্টা করছি জনবল কাঠামো পরিবর্তনের। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলছেন মুখোমুখি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দবাংলানিউজ: প্রান্তিক পর্যায়ে বিশেষ করে পোল্ট্রি খামারিদের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে একটি অসন্তোষ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যিক হারে পরিশোধ নিয়েই তাদের আপত্তি

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ: এটা আমাদের নজরেও আছে। তবে সরকারই-বা আর কতো ভর্তুকি দেবে। আমরা কিন্তু একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ে যেসব খামারি আছে, তাদের বিষয়ে এটা ভাবতে পারি। সবার ক্ষেত্রে এটা দেওয়া সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে আমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে সরকারের কাছে ভর্তুকি বাড়ানোর দাবি জানাই।

বাংলানিউজ: বাজারে চড়া মূল্যের বিপরীতে হিমায়িত গরুর মাংসের আমদানি নিয়ে বেশ কথা শোনা গিয়েছিলো। সেটার কী হলো?

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ: আমরা নিজেরাই তো স্বনির্ভর। এখন দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই আমাদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। আমরা নিজেরাও কিছু মাংস রপ্তানি করছি। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগটা এগিয়ে নিলেও আমরা এর বিপক্ষে। আমরা বলেছি, দেশে আজ অসংখ্য খামার গড়ে উঠেছে। প্রান্তিক পর্যায়ে বেকার যুবক  ও নারীরাও এতে যুক্ত হয়েছেন। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এতে লগ্নি করেছে। বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে হয়তো গরুর মাংসের দাম কিছুটা বেড়েছিলো। তবে তা সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। আর হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি করা হলে আমাদের এই খাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের চাইতে বরং নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।

বাংলানিউজ: তা সত্ত্বেও তো দেশে হিমায়িত মাংস আমদানি হয়!

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ: মাছ বা মাংস আমদানি করতে হলে কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী আমাদের মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন। আমরা কাউকে মাংস আমদানির কোনো অনুমতি দিইনি। তবে হ্যাঁ আমরা জানতে পেরেছি, পাঁচ তারকা মানের বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট নানা কায়দায় গরুসহ বিভিন্ন প্রাণির প্রক্রিয়াজাত মাংস নিয়ে আসে। আমাদের কাজ করতে হবে দেশেই সেই মানের মাংসের উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণ করা। তাহলে সেসব রেস্টুরেন্ট বা হোটেল কিন্তু আর বাইরে থেকে কোনোভাবেই মাংস আনতে পারবে না।

বাংলানিউজ: দুধের বিষয়েও তো অভিযোগ আছে...

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ: আমরা দেশেই যে দুধ উৎপাদন করছি, তার মান বজায় রাখাটাই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে টিনজাত গুড়ো দুধ খাবার ব্যাপারে প্রচারণা চালানো হয়। এই অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। আমি নিজের পরিবার থেকেই উদাহরণ দিই। সন্তান জন্মদানের পর আমার বৌমাকে চিকিৎসক পরামর্শ দিলেন নিয়মিত বিশেষ একটি ব্র্যান্ডের গুঁড়ো দুধ গ্রহণের। আমি মনে করি আমাদের এই অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। বরং গুঁড়ো দুধের মধ্যেই এখন নানা ধরনের জীবাণু ও রাসায়নিকের উপাদান পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আরেকটি বিষয়, বয়স হলে চিকিৎসকরা প্রায় বলেন, ফ্যাটছাড়া দুধ পান করতে। আমাদের ফ্যাটফ্রি দুধ বিপণন ব্যবস্থাও নিশ্চিত করলে আমদানি করা গুঁড়ো দুধের ওপর নির্ভরতা কমে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের মান বাড়াতেই হবে। এর কোনো বিকল্পই নেই। কারণ দেশের মানুষের পুষ্টি আর আমিষের যোগান দেওয়ার দায়িত্বটাই যে আমাদের।

বাংলার পুকুরেই সাগরের ভেটকি

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।