একই দশা মতিঝিলের জাতীয় সমবায় শিল্প সমিতির। এই সমিতির বর্তমান সভাপতি সাধনা দাশ গুপ্তা।
আবার শর্ত অনুসারে সঠিক দায়িত্ব পালন না করায় নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি। যদিও এই সমিতি হাইকোর্টে রিট করেছে তাদের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।
নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব আর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতাসহ এমন নানা জটিলতায় প্রতিবছর কমছে সমবায় সমিতির সংখ্যা। রোববার (২৮ জানুয়ারি) সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০১৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত সমবায় সমিতির মোট সংখ্যা ছিলো ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬৬২টি। এক বছর পর ২০১৫ সালের জুন মাসে সমিতির সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯৬-তে। পর্যায়ক্রমে ২০১৬ সালের জুনে কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩৪-এ। বর্তমানে এই সমিতির সংখ্যা ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭৫টি। নতুন নতুন সমিতির নিবন্ধনের হারও কমেছে। ২০১৪ সালে যেখানে নতুন নিবন্ধিত সমিতির সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ১৫১টি। সেখানে ওই সময় থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নতুন নিবন্ধিত সমিতির সংখ্যা মাত্র ৭ হাজার ৬৬৬টি।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ১ কোটি ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫৫৩ জন। ২০১৭ সালে সমিতিগুলোর মাধ্যমে ৬ লাখ ৪ হাজার ৭৩১ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। শুধু সমিতির সদস্যরাই ঋণ নিতে পারবেন। সমিতির বার্ষিক সভায় ঋণে সুদ হার নির্ধারণ করা হয়।
সমিতির নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে সমিতিগুলো কাজ করছে। যেন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং স্বনির্ভর অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে দেশের জনগোষ্ঠী।
কিন্তু নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব আর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতায় ক্রমেই কমে যাচ্ছে সমিতির সংখ্যা। বিশেষত নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে মামলায় পর্যন্ত জড়িয়ে পড়েছেন। হাইকোর্টে রিট আবেদন রয়েছে ৩৯৮টি। জজ কোর্টে রয়েছে ৩৩৮টি মামলার আবেদন।
পুঁজিগঠন, বিনিয়োগ, লভ্যাংশ বিতরণ ও কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও সমবায় সমিতির সংখ্যা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্বে পড়ে সমিতির সংখ্যা কমছে। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেকাংশে সমস্যা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচিত ব্যক্তিকে অনেকে মেনে নেয় না। অনেকে আবার নির্বাচন মানে না।
তিনি বলেন, নতুন সমিতি নিবন্ধনের কিছু আইন আছে। অনেকে এসব আইন মানার শর্ত পূরণ করে নিবন্ধন নেয়। পরে যখন দেখি আইন যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে না, তখন আমরা নিবন্ধন বাতিল করি। সমিতির সংখ্যা প্রয়োজনে আরও কমে যাবে, কিন্তু আমরা সক্রিয় সমিতি চাই। যাদের কার্যক্রম এক বছর ধরে বন্ধ, তাদের বাতিল ঘোষণা করছি।
সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক (সমিতি) ফখরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যে সমিতিগুলো অকার্যকর, তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছি। সমিতি নিবন্ধনেও আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ না করায় সমিতির নিবন্ধন বাতিল করেছি। অকার্যকর সমিতি রাখার দরকার নেই। সেজন্য প্রতিবছর সমিতির সংখ্যা কমছে।
সমিতিগুলোর নেতৃত্বের মামলায় জড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা মামলা নিষ্পত্তির জন্য কাজ করছি। তবে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার হার যত বেশি, তার চেয়ে অনেক বেশি নতুন করে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা। কারও স্বার্থে একটু আঘাত হলেই একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিচ্ছে। যা-ই ঘটুক, সমবায় সমিতি গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিকে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। সমিতি থাকলে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করতেই হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ