কুষ্টিয়ার তামাক চাষ বেশি হচ্ছে এমন এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট কৃষক এবং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় অধিকাংশ জমিতেই তামাকের চাষ হচ্ছে।
তামাক চাষ মৃদ্ধ এলাকায় গেলে যেদিকেই তাকানো যায় মাঠের পর মাঠ শুধু তামাকের গাছ। তবে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই খোদ কৃষি অফিসে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, কুষ্টিয়া জেলায় সর্বমোট আবাদি জমির পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৭৮ হেক্টর।
আর তামাক কোম্পানিগুলোর তথ্যমতে, গতবছর তামাকের চাষ হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বছর কুষ্টিয়া অঞ্চলে আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি প্রায় ৯ হাজার হেক্টর, ঢাকা টোব্যাকো ১৫ হাজার হেক্টর, জামিল টোব্যাকো ১২শ হেক্টর এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করেছে।
এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আরও ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে, যা মোট আবাদি জমির অধের্কের বেশি।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তামাক চাষি মধু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, তামাকে খুব অল্প সময়ে বেশি টাকা পাওয়া যায়। আমি গতবছর দুই বিঘা জমিতে চামাক চাষ করে এক লাখ ১৮ হাজার টাকা পেয়েছি। আমার খরচ হয়েছিল প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো। পরিশ্রম বেশি হলে কি হবে নগদ টাকা তো বেশি। সময়ও কম লাগে।
তিনি বলেন, ইক্ষু চাষ করলে জমিতে আর অন্য ফসল করা হয় না। যে জমিতে আখ করবো তার চেয়ে সেই জমিতে তামাকসহ অন্য ফসল করবো।
আরেক কৃষক করিম আলী বাংলানিউজকে বলেন, আখ চাষে লেবার খরচ আর পরিবহনেই সব খেয়ে যায়। আখ কাটার সময় হাত-পা ধরেও লেবার পাওয়া যায় না। তাছাড়া এলাকার সবাই তামাক করে আমি একা আখ করলে শিয়ালেই শেষ করে দেবে। আর আখে তো নগদ টাকা পাওয়া যায় না।
কুষ্টিয়া সুগার মিল সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুষ্টিয়া জেলায় ৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন।
গত বছরে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ হাজার মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছিল ৩৩ হাজার মেট্রিক টন।
আখ চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, আমি গত বছর ৩৭ শতক জমিতে আঁখের চাষ করেছিলাম। তাতে আমার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছিল প্রায় ২৯ হাজার টাকা। আখ পেয়েছি ৮ হাজার ৬০ কেজি। যার বাজার মূল্য ২৪ হাজার টাকা।
‘এছাড়া লেবার তো পাওয়া-ই যায় না। হাতে পায়ে ধরে আনলেও ঠিক মতো কাজ করে না। যারা সেন্টারে আখ ওজন দেয় তারা চাষিদের ওজনে কম বলে ঠকায়,’ বলেন তিনি।
কুষ্টিয়া সুগার মিলের আমলা সাব-জোনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল বারেক জানান, এই অঞ্চলে আগে মাঠের পর মাঠ আখ চাষ হতো। যেদিন থেকে এই অঞ্চলে তামাকের চাষ শুরু হয়েছে সেদিন থেকে আখ চাষে ধস নেমেছে। এখন মাঠে আখ নয় শুধু তামাক।
‘আমলা আখ সেন্টার থেকে আগে প্রতিদিন গড়ে ৯-১০ গাড়ি আখ যেত। এখন দুদিনে একটিও যায় কিনা সন্দেহ। আখই নেই যাবে কি?’
সরেজমিনে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা আখ সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, আখের চেয়ে পাট কাঠি বেশি। কয়েকমন আখ পড়ে আছে। আখ সেন্টারে কাঠের ব্যবসা এখন জমজমাট।
কুষ্টিয়া সুগার মিলের আমলা আখ সেন্টারের ইনচার্জ মিনহাজ বাংলানিউজকে বলেন, এখানে এখনও মানুষ আখ চাষ করতে চায় না। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আখ চাষ বাড়ানো যায়। আখ না থাকায় স্থানীয়রা কাঠ ফেলে রেখেছে।
যোগাযোগ করা হলে মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ তামাক চাষের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখায়। তবে আমরা বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে চেষ্টা করছি কিভাবে তামাক চাষ কমানো যায়।
কৃষকদের তামাকের বিকল্প অন্য ফসল চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এই কর্মকর্তা বলেন, আখ দীর্ঘমেয়াদী ফসল হওয়ায় কৃষকরা এটা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। কেননা কৃষক সেই সময় তিনটি ফসল চাষ করতে পারছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮
এমএ/