ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কৌশলে তামাকজাত পণ্যের প্রচার চালাচ্ছে বিএটিবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৮
কৌশলে তামাকজাত পণ্যের প্রচার চালাচ্ছে বিএটিবি ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো।

ঢাকা: রফিকুল ইসলামের পান-সিগারেটের দোকান রয়েছে ভাটারায়। জন প্লেয়ার গোল্ড লিফ লেখা লাল রঙের একটি সুদৃশ্য র‌্যাকের মধ্যে সাজিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন ধরনের সিগারেট। কয়েকদিন আগে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি থেকে তাকে এটি দিয়েছে বলেই জানালেন।

শুধু রফিকুল ইসলাম একা নন। তার মতো আরও কয়েকজন দোকানিকে মগ, ট্রে, থালা-বাটিসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়েছে কোম্পানিটি।

দেশে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ‘তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, বিপণন সংশ্লিষ্ট বা তা ব্যবহারে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না’ সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকার কারণে কৌশলে প্রচার করছে পণ্যের বিজ্ঞাপন।

তামাক মূলত হৃৎপিণ্ড, লিভার ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে।  ধূমপানের ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (এমফাইসিমা ও ক্রনিক ব্রংকাইটিস) ও ক্যানসার (বিশেষত ফুসফুসের ক্যানসার, প্যানক্রিয়াসের ক্যানসার, ল্যারিংস ও মুখগহ্বরের ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়।

আইনে বল‍া আছে- দান, পুরস্কার, বৃত্তিপ্রদান, পৃষ্ঠপোষকতার মতো সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশ নিলেও প্রকাশ করা যাবে না প্রতিষ্ঠানের পরিচয়। অথচ সিগারেট বিক্রি উৎসাহিত করতে দেখানো হয় নানা প্রলোভন। বিক্রেতাকে সিগারেট বহনের জন্য বিতরণ করা হয়, তামাকদ্রব্যের পরিচয় সম্বলিত বাক্স, চায়ের কাপ, নানা ধরনের হ্যান্ডবিল সদৃশ স্টিকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রক সেলের সমন্বয়ক খায়রুল আলম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার পুরোপরি বন্ধ হয়নি। এখন সময় এসেছে আইন সংশোধন করে এ ধরনের কৌশলী প্রচারণা বন্ধ করার। আইন সংশোধন হলে ভবিষ্যতে যাতে এভাবে কৌশলে বিলবোর্ড ও অন্য উপকরণ দিয়ে প্রচার করতে পারবে না। আমাদের পর্যাপ্ত জনবল না থাকলেও সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি ট্যোবাকো কোম্পানিগুলোর এ ধরনের প্রচারণা বন্ধ করতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজার দখলের অসুস্থ প্রতিযোগিতা আর আইনি মারপ্যাঁচের সুবিধায় থেমে নেই ট্যোবাকো কোম্পানিগুলোর কৌশলী বিজ্ঞাপন প্রচার। বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ‍অর্জন করতে পারলে দোকানের সাজ-সজ্জাসহ বিক্রেতাদের বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী দিয়ে থাকে কোম্পানির প্রতিনিধিরা। যদিও এ ধরনের অভিযোগ মানতে নারাজ উৎপাদনকারীরা।

তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স প্রধান মুবিনা আসাফ বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের কোনো বিজ্ঞাপন আমরা প্রচার করি না। অতি আগ্রহী কোনো ক্যাম্পেইনও  ব্রিটিশ  আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি করে না। বিজ্ঞাপন প্রচারে আমরা সব সময় আইন মেনে চলি।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৬০ লাখ লোক তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে মারা যায়। এরমধ্যে প্রায় ৬ লাখ পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সেন্টারও তামাককে সারাবিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৮
এসই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।