মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) টোকিওতে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে জাপানের ইকোনমি, ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মন্ত্রী হিরোশিগে সেকো দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় এ অঙ্গীকার করে দেশটি।
বৈঠকে জাপান সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সব ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
বিগত ২০১৬ সালে ঢাকায় হোটেল হলি আর্টিজানের অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ৭ জাপানি নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার যেকোনো সন্ত্রাসী ঘটনায় জিরো টলারেন্স নীতি পালন করে চলছে।
‘বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী ইতোমধ্যে ওই ঘটনার তদন্ত করে বিচারিক আদালতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে। ওই ঘটনার পর সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এ জাতীয় আর কোন সন্ত্রাসী ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। বর্তমানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। এখন জাপানি নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর বিদ্যমান লেভেল-২ ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশ খুশি হবে’।
জাপানের ইকোনমি, ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মন্ত্রী হিরোশিগে সেকো বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সব ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়নে জাপান খুশি। জাপান সরকার এবং জাপানের জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবার পরও বাংলাদেশকে দেওয়া বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে জাপান।
বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়ে সেকো বলেন, আমরা ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে এখন কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। জাপানি নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর বিদ্যমান লেভেল-২ ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১০০টি স্পেশাল ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য ইকোনোমিক জোন বরাদ্দ দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। এখানে জাপানের বিনিয়োগকারীরা স্মার্ট টেকনোলজি, ব্লু ইকোনমি, হাই-টেক প্রডাক্ট, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রডাক্ট, টেক্সটাইল, এগ্রো-প্রসেসিং প্রডাক্ট, অটো মোবাইল, আইসিটি এবং জুট প্রডাক্ট খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন।
‘স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশকে ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জাপান। বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতের ৪০টি প্রকল্পের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান। জাপান বাংলাদেশকে অনেক পণ্য রপ্তানিতে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে। ফলে জাপানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। গত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ১,০১২.৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য জাপানে রপ্তানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করেছে ১,৮৩৩.৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। জাপান বাংলাদেশকে চামড়ার হ্যান্ড গ্লাবসসহ আরও কিছু পণ্যের ডিউটি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা দিলে জাপানে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি আরও বাড়বে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে জাপানের ৩১২টি কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে এবং প্রায় ৪২ হাজার জনবল কাজ করছে। এখানে জাপানের বিনিয়োগ প্রায় ১,৪৬৭.২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, এরমধ্যে ২০১৭ সালে ডাইরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে ৭০.২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাপানি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ফ্যাশন ডিজাইন উন্নয়ন, উন্নতমানের পোশাক তৈরি এপিআই এবং লেদার পণ্য তৈরি খাতে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
পরে বাণিজ্যমন্ত্রী জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল অ্যান্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশন-এর উদ্যোগে বিজনেসম্যান টু বিজনেসম্যান বৈঠকে মতবিনিময় করেন। এরপর তিনি জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেটরো)-এর প্রেসিডেন্ট ইয়াশুশি আকাহোশির সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতেমা, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমই’র প্রেসিডেন্ট মো. সিদ্দিকুর রহমান, এলএফএমইএবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নাজমূল হাসান, বিজিএমই’র পরিচালক মুনির হোসেন, ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুল আযমসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
আরএম/এনএইচটি